চলতি পাঁচ রাজ্যের ভোটে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে কর্পোরেট সাহায্যের প্রস্তাব ফেরাল সিপিএমঃ কারাট

ছত্তিশগড়, মিজোরাম, তেলেঙ্গানা, মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানের চলতি বিধানসভা ভোটের জন্য ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে একটি কর্পোরেট সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল সিপিএম। দলীয় মুখপত্র ‘পিপলস ডেমক্রেসি’তে গত ২৫ নভেম্বর লেখা একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য এবং দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। যদিও এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে কোন রাজ্যের জন্য, কোন কর্পোরেট সংস্থার তরফ থেকে আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব সিপিএমকে দেওয়া হয়েছিল তা উল্লেখ করেননি কারাট। কেন্দ্রের শাসক বিজেপি তো বটেই, অন্য বিভিন্ন দলের বিরুদ্ধে যখন বারবার লাগামছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, তখন সিপিএমের এই কর্পোরেট সাহায্য প্রত্যাখ্যান যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ।

কারাট লিখেছেন, চলতি বিধানসভা ভোটে একটি রাজ্যের জন্য সিপিএমকে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য করার প্রস্তাব এসেছিল। যদিও দল আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তবুও এই কর্পোরেট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
কেন এই কর্পোরেট সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছে সিপিএম তা নিজের লেখায় ব্যাখ্যা করেছেন প্রকাশ কারাট। লিখেছেন, রাজনীতিতে আরও স্বচ্ছতা আনতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার এই ইলেক্টোরাল বন্ড আনলেও, আদতে তাতে বহু অস্বচ্ছতা রয়েছে। আসলে এটা বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থার থেকে ক্ষমতাসীন দলের টাকা আদায় ও অর্থের জোরে রাজনৈতিক ব্যবস্থা কিনতে চাওয়ার একটা ষড়যন্ত্র। কারাট লিখেছেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বর্ষের বাজেট পেশের সময় যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এই ইলেক্টোরাল বন্ডের কথা ঘোষণা করেন, তখন তিনি বলেছিলেন, রাজনীতিকে আরও স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করতেই এই বন্ড আনা হচ্ছে। কারাটের প্রশ্ন, স্বচ্ছতাই যদি উদ্দেশ্য হবে তাহলে কোন কর্পোরেট সংস্থা, কোন রাজনৈতিক দলকে সাহায্য করছে, তা প্রকাশ্যে আসা উচিত। তা কেন হচ্ছে না?
কারাটের বক্তব্য, ক্ষমতাসীন দলকে ধরে কোনও সংস্থা হয়তো কোনও কাজের বরাত পেল, বদলে ওই সংস্থাকে প্রকল্পের একটা নির্দিষ্ট অংশ বা শতাংশের টাকা শাসক দলের লোকেদের দিয়ে আসতে হোত এতদিন। অর্থাৎ, ক্ষমতার জোরে শাসক দল কোনও বাণিজ্যিক কর্পোরেট সংস্থাকে কাজ পাইয়ে দিয়ে এতদিন টেবিলের তলা থেকে দলের ভাঁড়ার ভরতো। মোদী সরকার তা বন্ধ করার দাবি করে ইলেক্টোরাল বন্ড চালু করেছে। কিন্তু সিপিএম মনে করে, আসলে এর ফলে স্বচ্ছতা তো আসবেই না, বরং দুর্নীতিকেই আইনি রক্ষাকবচ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে কারাট লিখেছেন, হয়তো শাসক দলকে ধরে ১ হাজার কোটি টাকার বরাত পেল কোনও সংস্থা, এরপর দলের তরফে বলা হল, বরাত পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রকল্পের ১০ শতাংশ, অর্থাৎ ১০০ কোটি টাকা ওই সংস্থাকে দিতে হবে। এবার ওই সংস্থা ব্যাঙ্কে গিয়ে ১০০ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনে সেই পার্টিকে দিয়ে দিলো। এতে দুর্নীতি ও রাজনীতিতে টাকার খেলা বন্ধ হচ্ছে না, স্বচ্ছতাও আসছে না। আর এখানেই আপত্তি সিপিএমের।
উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ বাজেটে কেন্দ্রের তরফে ঘোষণার পর বাজারে এই ইলেক্টোরাল বন্ড ছাড়া হয়েছে। বাছাই করা কিছু স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখা থেকে ১ হাজার থেকে ১ কোটি টাকা মূল্যের ওই বন্ড কিনতে পারবে যে কোনও সংস্থা। বন্ডের মাধ্যমে সেই টাকা দিতে পারবে যে কোনও স্বীকৃত রাজনৈতিক দলকে। বন্ড কেনার ১৫ দিন পর্যন্ত তা বৈধ থাকবে। তার মধ্যে ওই পার্টিকে বন্ড নিজের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। কিন্তু প্রকাশ্যে আসবে না সাহায্যকারী সংস্থা বা লাভবান দলের নাম।

Comments are closed.