দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় দাপট শুরু ঘূর্ণিঝড় যশের, নবান্নে রাজ্যপাল

মঙ্গলবার সেই বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে শুরু করে

উপকূলের সঙ্গে দূরত্ব কমছে যশের। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান। বুধবার সকালেই ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী উপকূল অঞ্চলে আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় যশ।

বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত সোমবার থেকেই আবহাওয়ার পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছিল। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা সহ একাধিক এলাকায় হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। মঙ্গলবার সেই বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে শুরু করে।

আলিপুর আবহাওয়া অধিকর্তা সঞ্জীব ব্যানার্জি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় যশ বর্তমানে পারাদ্বীপ থেকে ২২০ কিমি দূরে অবস্থান করছে। এবং দিঘা থেকে ৩২০ কিমি দূরে অবস্থান। ফলে শক্তি সঞ্চয় করে যে গতিতে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় যশ। তাতে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বেড়েছে ঝোড় হাওয়া সঙ্গে বৃষ্টি। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় যশের দাপটে উত্তাল সমুদ্র।

ঘূর্ণিঝড় গতিবেগ কোথায় কেমন থাকবে? তা নিয়ে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যাবে পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং কলকাতায়। ল্যান্ডফলের সময় হাওয়ার গতি থাকবে প্রতি ঘন্টায় ১৫৫ কিমি। কলকাতায় গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ৬৫ থেকে ৭৫ কিমি। তবে সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ৮৫ কিমি। এছাড়া, হুগলি, হাওড়া, নদিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় গতিবেগ থাকবে ৬০ থেকে ৮০ কিমি। সর্বোচ্চ গতিবেগ ৯০ কিমি। বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদে গতিবেগ হবে ৫০ থেকে ৬০ কিমি। সর্বোচ্চ গতিবেগ ৭০ কিমি। ২৭ তারিখ পুরুলিয়া বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে যাবে যশের গতিবেগ থাকবে ৫০ থেকে ৬০ কিমি।

সূত্রের খবর, যশের দাপটে সাগরদ্বীপের মহিষমারী গ্রামে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের নয়াচরের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মৎস্য দফতরের অতিথি নিবাসে। পাশাপাশি, হলদিয়ার নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় দিঘায় নামানো হয়েছে এনডিআরএফ বাহিনী। মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী। ইতিমধ্যেই এনডিআরএফ বাহিনী দিঘার গ্রামে গ্রামে গিয়ে সতর্ক বার্তা দিচ্ছে। গ্রামবাসীকে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য জানাচ্ছে। আগাম সর্তকতা জারি করে হয়েছে বীরভূমেও। দুবরাজপুর অন্তর্গত দেবীপুরচরে থাকা প্রায় ৭৫টি পরিবারকে রিলিফ সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় যশের প্রভাব ইতিমধ্যেই ঝাড়গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দেখা দিতে শুরু করেছে। সোমবার সন্ধ্যে থেকেই কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গোপীবল্লভপুরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ৭০ টি পরিবারকে স্কুলবাড়িতে এনে রাখা হয়েছে।

যশ আসার পূর্বে কলকাতাতেও লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। তৈরি করা হয়েছে ‘ইউনিফায়েড কমান্ড এজেন্সি’ নামে এক বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন দল। বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার থেকেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় গাছ কাটার কাজ শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় পৌঁছে যান আলিপুর আবহাওয়া দফতরে। তারপর তিনি যান নবান্নে।

Comments are closed.