শহরের বেসরকারি ল্যাবে কি বেশিরভাগ রিপোর্টই পজিটিভ আসছে? নেপথ্যে অর্থনৈতিক কারণ, উঠছে প্রশ্ন

শহরের ল্যাবরেটরিগুলোর একাংশ কি বেশিরভাগই কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট দিচ্ছে? এই প্রশ্নেই তোলপাড় রাজ্যের স্বাস্থ্য মহল।
কোভিড পর্বে এতদিন সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে যে অভিযোগ তা হল বেসরকারি হাসপাতালকে নিয়ে। কোথাও রোগী ভর্তি না নেওয়া আবার কোথাও আকাশ ছোঁয়া বিল। অনিয়ম রুখতে সরকারি বিধিনির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোগী ফেরানো যাবে না এবং সর্বোচ্চ কত খরচ, তা বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার উঠল আরও এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, শহরের বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলোর একাংশে করোনা টেস্ট করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসার হার অনেক বেশি।
বুধবার সকালে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিৎ শূর। লিখিতভাবে একটি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি।
বেহালার বাসিন্দা আইএসআইয়ের এক গবেষকের টিউমার অপারেশনের জন্য করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে হবে। রঞ্জিৎ শূরের অভিযোগ, গত ২৬ জুন মেডিনোভা ডায়গ্নস্টিকে করা করোনা টেস্টে তরুণীর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ফলে অপারেশন করা যায়নি। রঞ্জিৎ শূর অভিযোগ করেছেন, পরিচিত কোনও ডাক্তারই হোম কোয়ারেন্টিনের দায়িত্ব নিতে চাননি। তাই বাধ্য হয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল। সেখানে হাজার পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কিছু পাওয়া যায়নি। না কোনও উপসর্গ, না পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট। ৫ দিন ভর্তি রাখার পর ৩০ জুন বেলেঘাটা আইডি ছুটি দেয় তরুণীকে। বেসরকারি ল্যাবরেটরির কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট হাতে বেলেঘাটা আইডি থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন গবেষক।
এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি স্রেফ অর্থনৈতিক কারণেই ইচ্ছাকৃত রিপোর্ট পজিটিভ দেওয়া হচ্ছে? অভিযোগ, একজনের রিপোর্ট পজিটিভ আসা মানেই ওই পরিবারের বা আশেপাশের লোকেদেরও টেস্ট করাতে হবে। ফলে একটি রিপোর্ট পজিটিভ মানেই আরও বেশ কয়েকটি টেস্ট। বেশি টেস্ট, বেশি মুনাফা।
রঞ্জিৎ বাবু পোস্টে দাবি করেছেন, বিদায়ী ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ এই সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অতীন ঘোষ জানিয়েছিলেন, দাবি মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিৎ শূরের।
এই প্রেক্ষিতেই পোস্টে রঞ্জিৎ শূর প্রশ্ন তুলেছেন, ৫ দিন ধরে এত কোভিড রোগীর সঙ্গে থেকে মেয়েটি যদি এখন সত্যিই কোভিড আক্রান্ত হন, তার জন্য কে দায়ী হবে? পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন উঠছে, পজিটিভ রিপোর্টের ভিত্তিতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের একটি বেড ৫ দিন ধরে আটকে রইল। কিন্তু কিছুই পাওয়া গেল না। এতে কি সত্যিই যাঁর চিকিৎসা প্রয়োজন তাঁকে বঞ্চিত করা হল না?
কোভিড পর্বের শুরুতে রাজ্যে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র ল্যাবরেটরিতে কোভিড পরীক্ষা করা যেত। তারপর ক্রমশ বেড়েছে সংখ্যাটা। এখন সরকারের পাশাপাশি একাধিক বেসরকারি ল্যাবরেটরিতেও কোভিড পরীক্ষা হচ্ছে। সে জন্য রাজ্য সরকার থেকে সর্বোচ্চ দামও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই উঠল পজিটিভ নির্ণয়ের পদ্ধতিতে বেনিয়মের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।

Comments are closed.