দিন হোক কিংবা মাঝরাত, ফোন নম্বর দিয়ে মহিলাদের সাহায্যের আশ্বাস নেটিজেনদের, ধর্ষণের প্রতিবাদে জাগছে সমাজ

বদলে যায় সময় স্থান-কাল-পাত্র-নাম। শুধু বদলায় না ঘটনার বাড়বাড়ন্ত আর বীভৎসতা। দেশ যত এগোচ্ছে ততই বাড়ছে মহিলাদের উপর অত্যাচার, ধর্ষণের মতো ঘটনা। ধর্ষণ করে খুন তো এখন প্রায় জলভাত হয়ে গিয়েছে। সেই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন হায়দ্রাবাদের এক তরুণী পশু চিকিৎসক। অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুন করে তাঁকে পুড়িয়ে মারে এক ট্রাক চালক-সহ ৪ দুষ্কৃতী। শুক্রবার এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই দাবি উঠছে ঘটনার দ্রুত বিচারের। একদিকে দোষীদের দ্রুত ফাঁসির দাবি উঠেছে তেমনি অভিযুক্তদের জনগণের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবিও করেছেন কেউ কেউ। নির্ভয়া কাণ্ডের মতো এই ঘটনার প্রতিবাদেও দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে।
২০১১ সালে দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের কথা মানুষ আজও ভোলেননি। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, কবে শেষ হবে এই সামাজিক অভিশাপ? কবে রাস্তায় নিরাপদে পথ চলতে পারবেন মহিলারা? সে যাত্রায় কঠোর করা হয়েছিল ধর্ষণ বিরোধী আইন।  কিন্তু তারপরও বদলায়নি ছবি। দিন দিন বাড়ছে ধর্ষণ, গণধর্ষণের মতো ঘটনা। কাঠুয়া, উন্নাও, হায়দ্রাবাদ সেই সব ঘটনার তালিকায় এক একটি সংযোজন মাত্র। এবারও হায়দ্রাবাদের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। পথে নেমে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও জোটবদ্ধ হচ্ছেন প্রতিবাদীরা। পাশাপাশি অনেকেই বলছেন, কবে নতুন কঠোর আইন প্রণয়ন হবে, কবে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, সরকার কী করবে, সেই ভরসায় বসে না থেকে নতুন কিছু করতে হবে।
সহনাগরিক এবং প্রতিবেশী হিসেবে মহিলাদের যাতে আশ্বস্ত করা যায় এবং তাদের নিরাপত্তা দেওয়া যায় এই চিন্তা থেকেই হায়দ্রাবাদের ঘটনার প্রতিবাদে অভিনব প্রচার শুরু হয়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রশংসনীয় এই উদ্যোগে যোগ দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ক্লাব এবং ব্যক্তিগতভাবেও অনেকেই ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন নিজেদের নাম, ফোন নম্বর এবং এলাকার নাম। সব পোস্টের বয়ানই মোটামুটি এক। বলা হচ্ছে, ওই এলাকায় কোনও মহিলা বিপদের সম্মুখীন হলে তাঁরা যেন ওই নম্বরে ফোন করেন। তা হলে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সামাজিক প্রচারের মূল কারিগর পুরুষরাই। শহরের একটি নামী পুজোর উদ্যোক্তা ক্লাবের তরফেও তাদের কয়েকজন সদস্যদের ফোন নম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে বলা হয়েছে, মহিলারা যদি ওই এলাকায় কোনও বিপদে পড়েন তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে। সবরকম সাহায্যের জন্য প্রস্তুত ক্লাব সদস্যরা।

ওই ক্লাবের এক সদস্য জানিয়েছেন, বর্তমানে যেভাবে নারীদের উপর অত্যাচার এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে তাতে একটি সংগঠন এবং নাগরিক হিসেবেও ব্যক্তিগতভাবে সদস্যদের কিছু সামাজিক দায়িত্ব থেকে যায়। সেই তাগিদ থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তাদের আশা, এই রকম প্রচার অন্যান্য সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন মানুষ বিশেষত যুবক এবং পুরুষদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে। সমাজের অর্ধেক আকাশের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের পাশে দাঁড়াবে বাকি অর্ধেক। এই বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছেন বহু সাধারণ মানুষ। তাঁরা জানিয়েছেন যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রেরণাদায়ক। আরও বড় আকারে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমাজের নানা অংশে এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে বলে আশাবাদী নেটিজেনরা।

Comments are closed.