গোটা বিশ্বে মদ্যপান করেন ২৪০ কোটি মানুষ, মদ্যপানের হার সবচেয়ে বেশি ডেনমার্কে। সমীক্ষায় প্রকাশ

ন’মাসে-ছ’মাসে বা বিশেষ কোনও উপলক্ষ্যে স্বল্প পরিমাণ মদ্যপানে আর কীই বা এমন ক্ষতি? এমনটি যাঁরা ভাবেন, তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ। আপনি স্বল্প সুরাপ্রেমীই হোন, বিশেষ দিনে কোনও অনুষ্ঠানে পান করেন বা প্রাত্যহিক মদ্যপ্রেমীই হন, মদ পান করলেই আপনার শরীরে তার ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ার প্রভূত আশঙ্কা থাকে। অতএব, ভালো যদি থাকতে চান, যতটা পারেন দূরে থাকুন সুরাসঙ্গ থেকে।
সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই এটিকে সর্বকালের সবচেয়ে বড় এবং ব্যাপক আকারে করা সমীক্ষা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘দ্য গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিস স্টাডি’ বলে একটি প্রকল্প রয়েছে সিয়াটেলের ইউনিভার্সিটি অফ আমেরিকার। এই প্রকল্পের আওতায় বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় মদ্যপান নিয়ে একটি বিস্তারিত সমীক্ষা রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে দি ল্যানসেট মেডিকাল জার্নালে। এই সমীক্ষাটি ও তার তথ্য বিশ্লেষনের দায়িত্ব ছিলেন ইনস্টিটিউট অফ হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন-এর গবেষকরা। মদ্যপান ও শরীরে তার কী প্রভাব, এই নিয়ে বিশ্বের ১৯৫ টি দেশে অনুসন্ধান চালিয়েছেন গবেষকরা। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চলা দীর্ঘ এই সমীক্ষায় প্রায় ৭০০ রকম পরীক্ষা ও সেই সম্পর্কিত বিভিন্ন স্টাডি রিপোর্ট খঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও, মানুষের মদ্যপানের পরিমাণ ও শরীরে তাঁর প্রভাব জানতে বিশ্বের ২ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষকে এই সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সমীক্ষাতে বলা হয়েছে, শরীরে মদ্যপানের কু-প্রভাব এড়াতে, মদ্যপানের সবচেয়ে নিরাপদ পরিমাণ হল ‘শূন্য’। অর্থাৎ কু-প্রভাব এড়াতে সুরা পান থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত রাখুন। মাঝে সাঝে অল্প মদ্যপানে শরীরে কোনও কূ-প্রভাব পড়ে না, এই মিথ কার্যত ভাঙতে চলেছে এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, মদ্যপানের জেরে ২০১৬ সালে বিশ্বজুড়ে ২৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সমীক্ষায় প্রকাশ, মদ্যপানের ফলে গোটা বিশ্বের ১৫ থেকে ৪৯ বয়সী জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষ প্রতি বছর প্রাণ হারান। এছাড়াও মৃত্যু ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তরান্বিত করে মদ্যপান। সমীক্ষায় এও বলা হয়েছে, অল্প বিয়ার খেলে বা মদ্যপান করলে শরীরে তার ভালো প্রভাব পড়তে পারে বলে যে চালু ধারণা রয়েছে, তাও সম্পূর্ণ ঠিক নয়। দিনে এক গ্লাস ওয়াইন পান হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা স্ট্রোকের সম্ভবনা কমায় বলে যা বলা হয় তা কিছুটা ঠিক হলেও শরীরের অন্যান্য অংশে এর যা কু-প্রভাব পড়ে, তার তুলনায় এই উপকার একেবারেই নগণ্য।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে ৫০ বছরের পর মদ্যপান, বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। গোটা বিশ্বে পঞ্চাশোর্ধ যে সকল মানুষের মৃত্যু হয়, পুরুষদের ক্ষেত্রে তার প্রায় ২৭ শতাংশ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে তার প্রায় ১৯ শতাংশই হয় মদ্যপানের অভ্যাসের কারণে। সমীক্ষায় আরও একটি উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। বলা হয়েছে গোটা বিশ্বে সারা বছর কম বয়সীদের যত জনের মৃত্যু পথ দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যার কারণে হয়, তার থেকেও বেশি সংখক অল্প বয়সীর মৃত্য হয় মদ্যপানের জন্য। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রথমে অল্প পরিমাণে খেতে খেতেই পরে যতো দিন যায় তা বেশি পরিমাণে খেতে শুরু সুরাপ্রেমীরা, যা অত্যন্ত চিন্তার। তাই গবেষকদের উপদেশ, ভালো যদি থাকতে চান, তাহলে সুরাকে একেবারে অগ্রাহ্য করাই শ্রেয়।
সমীক্ষায় প্রকাশ, গোটা বিশ্বে প্রায় ২৪০ কোটি মানুষ মদ্যপান করেন। ৩৯ শতাংশ পুরুষ এবং ২৫ শতাংশ মহিলা মদ্যপান করে থাকেন। পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মদ্যপানের প্রবণতা ডেনমার্কে, সবচেয়ে কম পাকিস্তানে। ডেনমার্কের ৯৭ শতাংশেরও বেশি পুরুষ মদ্যপান করেন। পাকিস্তানের এর পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম। মহিলাদের মধ্যেও মদ্যপানে এক নম্বরে ডেনমার্ক। ডেনমার্কের ৯৩ শতাংশ মহিলা মদ্যপান করেন। বাংলাদেশের মহিলা সবচেয়ে কম মদ্যপান করেন।

Comments are closed.