সেনাবাহিনী নিজের স্বার্থে জিতিয়েছে ইমরানকে, ভারতের উচিত সতর্ক থাকা, মত আরএসএসের।

পাকিস্তানে ইমরানের খানের নির্বাচনী সাফল্য আসলে সে দেশের সেনাবাহিনীর জয় এবং এব্যাপারে ভারতের সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করে আরএসএস। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে উঠে এসেছে ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই)। বৃহস্পতিবার ইমরানের এই জয়ের পরই শুক্রবার, ২৭ শে জুলাই আরএসএসের মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’ এ সংঘ এবং বিজেপির প্রবীণ নেতা শেষাদ্রি চারি লেখেন, ‘নওয়াজ শরিফের পাকিস্থান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি সে দেশের সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিরূপ ভূমিকা নেওয়ায় রাজনীতিতে কোনও অভিজ্ঞতা না থাকা ইমরান খানকেই পাক সেনা বেছে নিয়েছে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে। নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতেই সাধারণ নির্বাচনে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে’। তিনি আরও লিখেছেন, ‘ইমরানের জয় আসলে গণতন্ত্রের হার এবং ইসলামাবাদের এই রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি এবং পাকিস্তানের দিকে ভারতের সতর্ক নজর রাখা জরুরি’। বৃহস্পতিবার পাকিস্তান নির্বাচনের ফল ঘোষণা শুরু হওয়া মাত্রই স্পষ্ট হতে শুরু করে, পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে হারিয়ে এক নম্বর দল হিসেবে উঠে আসছে ইমরানের পিটিআই। সেদিনই প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন ইমরান। কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সে দেশের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক। সেই সঙ্গে ভারতের সংবাদমাধ্যমেরও সমালোচনা করেন তিনি। যদিও তা নিয়ে প্রকাশ্যে অন্তত কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি ভারতের বিদেশমন্ত্রক বা বিজেপির কোনও শীর্ষ নেতা। বরং পাকিস্তানের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নিয়ে সাবধানী নজর রেখেছে নয়া দিল্লি। কিন্তু আরএসএসের মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’ এ শেষাদ্রি চারির মতো সংঘ ঘনিষ্ঠ বিজেপির প্রবীণ নেতার লেখা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে এদেশের রাজনৈতিক মহল। চারি লিখেছেন, ‘পাকিস্তান মুসলিগ লিগ (নওয়াজ) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি সেনাবাহিনীকে এড়িয়ে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব তৈরির চেষ্টা করছিল। সেই কারণেই সে দেশের সেনাবাহিনী ইমরানকে বেছে নিয়েছে দেশের প্রধান পদে। এই নিয়ে সংশয় রয়েছে যে, ইমরান কি আদৌ কোনও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন’? তাঁর মতে, ‘ইমরান এমন এক পিচে ব্যাট করতে নেমেছেন, যেখানে বোলার, ফিল্ডার এবং আম্পায়ার হচ্ছে সে দেশের সেনাবাহিনী। যারা ইমরানকে যে কোনও সময় আউট করে দিতে পারে’।
শুধু শুক্রবার প্রকাশিত শেষাদ্রি চারির এই প্রতিবেদনই নয়, তার পরদিন ২৮ শে জুলাই ‘অর্গানাইজার’ এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইমরানকে কটাক্ষ করে লেখা হয়েছে, ‘তিনি একদিকে মহম্মদের দেখানো পথে দেশ চালনার কথা বলছেন, অন্যদিকে চিনের থেকে শিক্ষা নেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এটা আসলে ইসলামের সঙ্গে মার্ক্সের এক সংমিশ্রণ। কিন্তু এর ফলে পাকিস্তান ভবিষ্যতে আস্তে আস্তে চিনের দিকেই আরও ঝুঁকে পড়বে’। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই সে দেশে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি, দু’দলই নির্বাচনে রিগিংয়ের অভিযোগ তুলেছে। নির্বাচনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ইমরানের জয়ের পাক সেনার হাত রয়েছে বলে সরাসরি আরএসএসের মুখপত্রে লাগাতার প্রতিবেদন প্রকাশের পরে দু’দেশের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেবে তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.