শেষ ১০ দিনে দেশে করোনা সংক্রমণের হারে বিপুল বৃদ্ধি, সংক্রমিতের সংখ্যায় বিশ্বে প্রথম দশে ভারত

সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, কোভিড বৃদ্ধির হার কম হওয়ার কারণে ইনটেন্সিভ কেয়ারে রেখে করোনা রোগীদের চিকিৎসার তেমন দরকার পড়ছে না। যদিও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) এর তথ্য বলছে, দেশে গত চার সপ্তাহে করোনা পজিটিভিটির হার উর্ধ্বমুখী।

আইসিএমআরের রেকর্ড বলছে, গত ১৬ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা পজিটিভিটির হার ৪.৮ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নেমে এসেছিল। কিন্তু তারপর ফের তা বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে মে মাসের ২৩ তারিখে তা হয়েছে ৭ শতাংশ। তাহলে কি গত সপ্তাহ থেকে লকডাউন কিছুটা হালকা করায় এই হার বেশি বাড়ছে?

এই বৃদ্ধি যে যথেষ্ট উদ্বেগের তা ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে স্বীকার করে নিয়েছেন আইসিএমআরের ডিজি বলরাম ভার্গব। তবে আশার কথা, ভারতে করোনায় মৃত্যুহার এখনও স্থিতিশীল। ৩ থেকে ৩.৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে কোভিড পজিটিভ রোগীর মৃত্যুহার, জানাচ্ছে আইসিএমআর।

সরকারের দেওয়া বিভিন্ন তথ্যে লকডাউনের উপযোগিতা তুলে ধরা হয়েছে। আবার লকডাউন শেষ হওয়ার পরের ১৪ দিন শিথিলতার কথাও বলছেন সরকারের কেউ কেউ। গত সপ্তাহেই নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ পাল জানান, ২২ মে পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, ৩ মে দ্বিতীয় দফার লকডাউন শেষ হওয়ার পর সংক্রমণ অনেকটাই ঠেকানো গিয়েছে।

এদিকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারতে যেখানে দিনে ৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হত, এখন তা বেড়ে ১ লক্ষ হয়েছে। তারপর গত চার সপ্তাহে দৈনিক ৬ হাজার নতুন করোনা সংক্রমিতের কেস হাতে এসেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত অক্সফোর্ড মার্টিন স্কুলের একটি সমীক্ষা বলছে, ২৩ মে পর্যন্ত ভারতের ক্রমবর্ধমান করোনা পজিটিভ কেসের হার ৪.৫ শতাংশ, যা আমেরিকা, ইতালি, জাপানের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।

পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতায়াত বাড়ার ফলে করোনা পজিটিভিটি রেটও বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক নিজের নিজের বাড়ি ফিরেছেন। আগামী ১০ দিনে আরও ২,৬০০ শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যে করোনা পজিটিভিটির হার বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।

এদিকে বিশ্বে করোনা আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে প্রথম দশে পৌঁছে গিয়েছে ভারত। করোনা সংক্রমিতের সংখ্যার হিসাবে আমেরিকা, ব্রাজিল, রাশিয়া, ব্রিটেন, স্পেন, ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্কের পরই এখন ভারত।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ৬ হাজার ৯৭৭ জন। এই বৃদ্ধির জেরে করোনাভাইরাসে মোট সংক্রমিত ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮৪৫ জন।

Comments are closed.