জেএনইউতে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করে ইচ্ছাশক্তির নয়া নজির বিশ্ববিদ্যালয়েরই পাহারাদার রামজল মিনার

পেট চালাতে গিয়ে কলেজে আর পড়া হয়ে ওঠেনি। সংসার সামলাতে লেগে পড়তে হয়েছিল কাজে। কিন্তু মনে পড়ার ইচ্ছে ছিল ষোলো আনা। রাজস্থান ছেড়ে দিল্লি গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি পেয়েছিলেন জেএনইউতে। কিন্তু জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রামজল মিনাকে আবার বই ধরতে বাধ্য করেছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদর দরজায় নিত্য পাহারা দিতেন, এবার সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই বই-খাতা নিয়ে পড়তে ঢুকবেন রামজল মিনা। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করা ৩৪ বছরের রামজল মিনা। রাশিয়ান ভাষায় অনার্স নিয়ে ভর্তি হলেন কর্মক্ষেত্র জেএনইউতেই।
স্বপ্ন ছিল বড় অফিসার হওয়ার, ইচ্ছে ছিল বিদেশ ভ্রমণের। কিন্তু দারিদ্র স্কুল শেষ করেই রোজগারে ঢুকতে বাধ্য করে রাজস্থানের করৌলির বাসিন্দা রামজল মিনাকে। ২০১৪ সালে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ পেয়েছিলেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে গেট পাহারায় বসে ছাত্র-ছাত্রীদের আসা-যাওয়া দেখতে দেখতে পড়াশোনার জগতে ফেরার ইচ্ছেটা নতুন করে উস্কে উঠেছিল তিন সন্তানের বাবা রামজল মিনার। বাকিটা গল্পের মতো। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন রামজল মিনা, সেই জেএনইউয়ের এন্ট্রান্স পাশ করে রাশিয়ান ভাষায় অনার্স নিয়ে ভর্তি হলেন তিনি। স্থাপন করলেন ইচ্ছাশক্তির নয়া দৃষ্টান্ত।
রামজল মিনার পড়াশোনা রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলে। বাড়িতে প্রবল দারিদ্র। কলেজে ভর্তি হওয়া তখন তাঁর কাছে বিলাসিতা। তাই স্কুল পাশ করেই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন রোজগার। সংসারের হাল ফেরাতে দিল্লি পাড়ি দেন রামজল। ২০১৪ সালে রাজধানীতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি পান দেশের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জেএনইউয়ে। যা রোজগার হয় তাতে এখন মোটামুটি চলে যায় সংসার। কিন্তু কলেজে পড়তে না পারার খেদ রয়ে গিয়েছিল মনে। তাই কাজ-সংসার সামলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস ও হিন্দি নিয়ে গত বছরই তিনি গ্রাজুয়েট হন মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

তবে এখানেই থামেননি জেএনইউয়ের চৌকিদার রামজল। বিদেশি ভাষা শেখার প্রবল আগ্রহ ছিল ছোট থেকেই। শুরু করেন জেএনইউর কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি। সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়ম করে পড়াশোনা করেন রামজল মিনা। এন্ট্রান্সের হার্ডল পার করার জন্য জেএনইউর কয়েকজন পড়ুয়াও তাঁকে সাহায্য করেন বলে জানিয়েছেন রামজল।
আর গত সপ্তাহে জেএনইউয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা যায় তাতে নাম রয়েছে জেএনএইয়ের পাহারাদার রামজল মিনার। কিন্তু রাশিয়ান ভাষায় অনার্স কেন? মিনার কথায়, বিদেশ বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছা তাঁর। তাই অন্তত একটা বিদেশি ভাষা জানা খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাতেও বসার লক্ষ্য রয়েছে রামজল মিনার।
জেএনইউয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত রামজল জানান, এখানে সামাজিক ভেদাভেদ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে শিক্ষক সবাই তাঁকে উৎসাহিত করেছেন। জেএনইউয়ের পরিবেশ তাঁকে নতুন করে অনুপ্রেরণা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া, পাশাপাশি পেট চালাতে সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্ব সামলানো বেশ অসুবিধার। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাঁকে সমস্ত সাহায্য করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

Comments are closed.