বেগুসরাই থেকে লড়তে টাকা জোগাড়ে বেনজির ক্রাউড ফান্ডিং ক্যাম্পেন কানহাইয়া কুমারের, ৩০ লক্ষ টাকা উঠল এক দিনে

‘ঠিক যেমন ফোঁটা ফোঁটা জলে কলসী ভরে ওঠে, একটি ইটের উপর আর একটি ইট বসিয়ে তৈরি হয় বাড়ি, ঠিক তেমনই আপনাদের একটি করে টাকার সাহায্যে শোষিত এবং বঞ্চিত মানুষদের কণ্ঠ সংসদের ভিতরে পৌঁছনোর লড়াই লড়া হবে।’
ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছেন, বিহারে মহাজোটের সমর্থন পাবেন না। বুঝে গিয়েছেন, কেবলমাত্র সিপিআই, সিপিএম এবং বামেদের যৌথ শক্তিতেই লড়তে হবে গো বলয়ে অতি হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পোড়খাওয়া গিরিরাজ সিংহের বিরুদ্ধে। কিন্তু সহজে রণে ভঙ্গ দেবেন না বেগুসরাই কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী কানহাইয়া কুমার, বুঝিয়ে দিয়েছেন তা-ও। নির্বাচনের খরচ জোগাড় করতে গরিব পরিবারে জন্মানো আশাকর্মীর ছেলে কানহাইয়া বেছে নিলেন এক ব্যতিক্রমী রাস্তা।

লোকসভা ভোটে লড়ার বিপুল খরচ সামাল দিতে এবার দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে অভূতপূর্ব এক ব্যাপার ঘটিয়ে ফেললেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি কানহাইয়া কুমার। শুরু করলেন ক্রাউড ফান্ডিং ক্যাম্পেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, বেগুসরাই কেন্দ্রের ভোটাররা তাঁকে সমর্থন করবেন ভোট দিয়ে এবং বাকিরা করবেন তাঁর সঙ্গে লড়াইয়ে যোগ দিয়ে। কানহাইয়ার আবেদন, তাঁর বক্তব্যকে যাঁরা সমর্থন জানাচ্ছেন, এক টাকা দিয়ে নির্বাচনী তহবিলে সাহায্য করুন, যাতে নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠ ভারতের সংসদে পৌঁছে দেওয়া যায়। আর শুরুতেই বিপুল সাড়া মিলেছে।
২৬ শে মার্চ, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টা নাগাদ কানহাইয়া কুমার তাঁর ফেসবুক পেজে একটি মিনিট তিনেকের ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে তিনি জানান, ‘সমস্ত ক্ষেত্রে আজ শাসক দল হামলা চালাচ্ছে। দেশে এখন একদিকে নোটতন্ত্র, অন্যদিকে লোকতন্ত্র (গণতন্ত্র)। আমি সবার কাছে আবেদন করতে চাই, এই ঐতিহাসিক নির্বাচনে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে একত্রিত হতে হবে। আমি ভোটে লড়ছি। আপনারা আমাকে ভোট দিন, আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। আপনি ক্ষমতা অনুযায়ী আমাকে সাহায্য করুন। এক টাকা থেকে যে কোনও পরিমাণ টাকা দিয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারেন।’ এর পরই কানহাইয়া বলেন, তাঁকে ক্রাউড ফান্ডিং করতে। এবং যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্রাউড ফান্ডিং করা যাবে তার লিঙ্কও দেন তিনি।
ইতিমধ্যেই সেই ক্রাউড ফান্ডিং পেজে এই খবর লেখা পর্যন্ত (বুধবার বিকেল সাড়ে ৪ টে) অনুদান পড়েছে ৩০ লক্ষ ১ হাজার ১৯৪ টাকা। এখনও পর্যন্ত ২,৩২৯ জন অনুদান দিয়েছেন। লক্ষ্যমাত্রা ৭০ লক্ষ টাকা তোলার এবং এই প্রচার শেষ হতে এখনও বাকি ৩২ দিন। পেজে অনুদানদাতাদের নাম ও অনুদানের পরিমাণেরও উল্লেখ করা হচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে জনৈক মহেশ্বর পেরি কানহাইয়াকে ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন তহবিলে ৫০ হাজার কিংবা তার বেশি টাকা দিয়েছেন। দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এমন নজির আর নেই।

লড়াইটা যথেষ্টই কঠিন। বিপক্ষে কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা। মিলবে না কংগ্রেস-আরজেডির সমর্থন। কিন্তু কানহাইয়া যে সহজে লড়াইয়ের ময়দান ছাড়ার বান্দা নন, তা তাঁর কথা থেকেই পরিষ্কার। এবার ভারতের নির্বাচনের ইতিহাসে জনগণের তহবিল সংগ্রহের এমন নতুন পদ্ধতি সফলভাবে আমদানি করার পিছনেও ঢুকে গেল বিহারের বেগুসরাই লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী কানহাইয়া কুমারের নাম।

Comments are closed.