দেশের জিডিপি তলানিতে কিন্তু এগোচ্ছে কেরল, মন্দার বাজারেও বৃদ্ধিতে সেরা বাম শাসিত রাজ্য

সারা দেশ ধুঁকছে অর্থনৈতিক মন্দায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে জিডিপি বৃদ্ধির হার। এই অবস্থায় স্বতন্ত্র বাম শাসিত কেরল রাজ্যে। আর্থিক বৃদ্ধি থেকে উৎপাদন, শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষা, সবেতেই অন্যান্য রাজ্য থেকে ঢের এগিয়ে পিনারাই বিজয়নের কেরল।
২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে কেরলে বৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশ। যা ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের চেয়েও বেশি। সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরে কেরলের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৩ শতাংশ। প্রশ্ন উঠেছে, কেমন করে সম্ভব হল এটা।
গত বৃহস্পতিবার কেরল বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে পেশ করা ২০১৯ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, যখন দেশজুড়ে গড় অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশ, সেখানে কেরলের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশ। শুধু গড় জিডিপি নয়, মাথাপিছু আয়েও দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে এই রাজ্য। ২০১৯ অর্থবর্ষে রাজ্যের মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৭৮ টাকা। সংশ্লিষ্ট অর্থবর্ষে ভারতের গড় মাথাপিছু আয় ৯৩ হাজার ৬৫৫ টাকা।
গত বছর থেকে ভারতের শিল্প উৎপাদনে দৈন্য প্রকট হচ্ছে। এখানেও কেরল অনন্য। গত আর্থিক বছরে যেখানে তাদের উৎপাদন খাতে বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩.৭ শতাংশ, তাৎপর্যপূর্ণভাবে ২০১৯ আর্থিক বছরে তা বেড়ে ১১.২ শতাংশ ছুঁয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ১,৩২১.৯৪ কোটি টাকা। মোট ১৩ হাজার এমএসএমই ইউনিট ওই আর্থিক বছর থেকে কাজ শুরু করেছে। রাজ্যের মোট সঞ্চয়ের মধ্যে পারিবারিক সঞ্চয় দাঁড়িয়েছে ৬১.৫ শতাংশে। রাজস্ব ও আর্থিক ঘাটতিও গত এক বছরের তুলনায় যথাক্রমে ২.২৩ এবং ৩.৪৫ শতাংশ কমিয়ে ফেলেছে বাম সরকার। কেরলের রাজস্বের ৫৪.৫৪ শতাংশ উঠে এসেছে বিভিন্ন কর থেকে। সেটাও দেশের তুলনায় বহু অংশে এগিয়ে।

আরও জানতে ক্লিক করুন, এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে কী পেলেন?

তবে কৃষিক্ষেত্রে ঈষৎ নেতিবাচক বৃদ্ধি হয়েছে। কেরল সরকার অবশ্য এর জন্য গত বছরের ভয়াবহ বন্যাকে দায়ী করেছে। সেদিক থেকে মৎস্যচাষের ক্ষেত্রে আবার বহু এগিয়ে দক্ষিণের এই একমাত্র বাম রাজ্যটি। ২০১৫-১৬ সাল থেকে মৎস্যচাষে ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছিল কেরল, তবে ২০১৯ অর্থবর্ষে ১৯ হাজার ৮০০ লক্ষ টন মাছ উৎপাদন করেছে তারা।
শিক্ষাক্ষেত্রেও উজ্জ্বল ছবি কেরলে। সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরে কেরলের ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫৫৮ জন পড়ুয়া প্রাইভেট স্কুল থেকে সরকারি ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলে নাম লিখিয়েছে।
কেরলে অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভিন রাজ্যের শ্রমিক ও কর্মচারীদের ভিড় বাড়ছে। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে কেরলে ভিন রাজ্যের শ্রমিক ছিল ২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮৪৯ জন। তা চলতি ২০১৯ অর্থবর্ষে হয়েছে ৩ লক্ষ ৯৩ হাজার ২৮১ জন। ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থায় দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কেরল। স্টার্টআপ বিজনেসে র‍্যাঙ্কিংয়ে ‘টপ পারফর্মিং’ রাজ্য হিসেবে নাম লিখিয়ে নিয়েছে কেরল।
বাজেট পেশের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজাক বলেন, কেরলের শিল্পক্ষেত্রে বৃদ্ধির ছবি প্রমাণ করছে, রাজ্যের অর্থনীতি যেকোনও প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে সামনে এগোতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

Comments are closed.