আত্মহত্যা করতে গিয়ে ফিরে এসে ছিলেন, অবসাদ থেকে বাঁচতে সাইকেল সম্বল করে দেশ দেখতে বেরিয়ে পড়লেন কৃষ্ণব্রত 

আজ থেকে তিন মাস আগে সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ মাঝ রাতে বাড়ির কাউকে না জানিয়েই ‘পালিয়ে ছিলেন’। সাইকেল চালিয়ে ১০ টি রাজ্য ঘুরে সদ্য নিজের বাড়িতে ফিরেছেন। TheBengalStory এর সঙ্গে সাইকেল নিয়ে দেশ ভ্রমণের নেপথ্যের গল্প ভাগ করে নিলেন কৃষ্ণব্রত দাস। 

হঠাৎ সাইকেল নিয়ে বেরোনোর সিদ্ধান্ত কেন নিলেন? দেখুন বাইকে করে বা অন্যভাবে ঘুরতে যে টাকা লাগে, তা আমার ছিল না। তাই সাইকেলই ভরসা। বাড়ির লোককে যখন জানালেন আপনার এই ট্যুর নিয়ে তাঁদের কী প্রতিক্রিয়া ছিল? ৭ সেপ্টবর রাত ২ টোয় যখন বাড়ি থেকে রওনা দি, ওঁদের কাউকে কিছু জানায়নি। জানালে যেতে দিতেন না। 

‘এ তো বাড়ি থেকে পালিয়ে’ রীতিমতো! প্রশ্ন শুনে কিছুটা হাসলেন কৃষ্ণ। জানালেন, কিছুটা সেরকমই বলতে পারেন। আসলে এছাড়া উপায়ও ছিল না আমার। 

কৃষ্ণ জানালেন, তাঁর স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগ দেওয়ার। সেই মতো ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিলেন। পরীক্ষার অন্যান্য পর্যায়ে পাস করলেও বেশ কয়েকবার মেডিক্যাল টেস্টে অসফল হন তিনি। আর বারবার এই ব্যর্থতা থেকেই অবসাদ ঘিরে ধরে তাঁকে। কথায় কথায় বললেন, যেদিন রওনা হই, তার ঠিক দিন তিনেক আগেই সুইসাইড করতে যাই। শেষ মুহূর্তে ফিরে আসি। তখনই কিছু একটা করার তাগিদ থেকেই বেরিয়ে পড়ি। ভাবলাম মৃত্যুর আগে একবার দেশটা ঘুরে নি। কিছুটা ঠাট্টা করে বললেন ২৩ বছরের কৃষ্ণ। 

বাড়ির লোককে কখন জানালেন? ৭ তারিখ রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কয়েক কিমি সাইকেল চালানোর পর ভোরের দিকে বাড়িতে জানাই। 

দীর্ঘ দু’মাসের সফর নিয়ে বলতে গিয়ে কৃষ্ণ জানালেন, দেখুন আমি তো ঠিক পরিকল্পনা করে বেরোইনি। প্রাথমিকভাবে ঠিক করে ছিলাম আগে মুম্বই যাবো। সেখানে থেকে বাকি গন্তব্য স্থির করবো। এমনও হয়েছে শ্মশানেও রাত কাটাতে হয়েছে। প্রথম দিকে তো বেশির ভাগ সময় কখনও থানায়, কখনও ফুটপাত ঘুমিয়েছি। তবে কষ্ট যেমন হয়েছে অনেক ভালোবাসাও পেয়েছি।

তাঁর এই দীর্ঘ সফরে গুজরাটের এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। বললেন, আমার পুরো জার্নিটার বিস্তারিত ফেসবুকে পোস্ট করতাম। সেখান থেকেই গুজরাটে থাকাকালীন সুরাটের কয়েকজন বাঙালি আমায় পুজো উদ্ব্ধন করতে ডাকলেন। তারপর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা হওয়ার সুযোগ হয়ে গেল। ওই মুহূর্ত গুলো ভোলার নয়। 

১২৭০ টাকা পকেট নিয়ে বেড়িয়ে ছিলেন। ৮৮ দিনে ঘুরেছেন ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব,রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার,ছত্রিশগড়। সফরের বেশির ভাগ খরচটাই ক্রাউড ফান্ডিং এর মাধ্যমে হয়েছে বলে জানালেন কৃষ্ণ। ৮৮ দিনের এই সফরে সেরা মুহূর্ত বলতে গিয়ে কৃষ্ণ জানালেন, ওয়াঘা বর্ডারে ভারত-পাকিস্থানের সেনাবাহিনীর প্যারেডের দৃশ্য দেখে গায়ে কাঁটা দিয়েছিল রীতিমতো। প্রায় তিন ঘন্টা অপেক্ষার পর ৩০ মিনিট প্যারেড দেখে ছিলাম। 

এই যে প্রায় তিন মাস ঘুরে এলেন, এখন কী মনে হচ্ছে? অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তবে বাড়িতে ভালো লাগছে না, শীঘ্রই আবার বেরিয়ে পড়ব। সূর্য ডোবার পর চিন্তা শুরু হতো রাতে কোথায় থাকব? ওই অনিশ্চয়তার খুব অভাব বোধ করছি এখন, হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন কৃষ্ণব্রত দাস। 

Comments are closed.