শশী থারুর চান, হালভাঙা কংগ্রেসে নেতা নির্বাচন হোক ভোটের মাধ্যমে

লোকসভা ভোটের পর থেকেই প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন দল কংগ্রেস চলছে দিশাহীন ভাবে। পরাজয়ের দায় ঘাড়ে নিয়ে সভাপতির পদ ছেড়েছেন রাহুল গান্ধী। তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য কংগ্রেসের একদল নেতা এখনও সক্রিয়। কিন্তু রাহুল অনড়। সনিয়া গান্ধী অন্তর্বর্তী সভানেত্রী হিসেবে কাজ চালাচ্ছেন। তিনিও চান, পুত্র রাহুল হাল ধরুক। সনিয়ার নিজের শরীর খুব খারাপ। কিছুদিন পর পরই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এই অবস্থায় দিল্লি বিধানসভা ভোটের পর কংগ্রেসের মধ্যে খেয়োখেয়ি আরও বেড়েছে। এক এক নেতা এক এক রকম কথা বলছেন। এক নেতা অন্য নেতার উদ্দেশে বিরূপ মন্তব্য করছেন। কে দলের হাল ধরবেন, তা নিয়ে নানা সমীকরণ চলছে। এরই মধ্যে দলের সাংসদ শশী থারুর নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নিয়োগের দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, ওয়ার্কিং কমিটির কাছে আবেদন করছি, কর্মীদের চাঙ্গা করতে এবং ভোটারদের অনুপ্রেরণা দিতে নেতৃত্বের নির্বাচন হোক। শশীর এই দাবি নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে।
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর রাহুল ইস্তফা দিয়ে চেয়েছিলেন, দলের অন্য প্রবীণ পদাধিকারীরাও পদ ছেড়ে দিন। কিন্তু তাঁর ডাকে একদমই সাড়া মেলেনি। ভোটের আগেই রাহুল তাঁর ঘনিষ্ঠ অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ে টিম সাজাতে। কিন্তু সনিয়ার কাছের প্রবীণ নেতারা কলকাঠি নাড়ানোয় রাহুলের ইচ্ছে পূরণ সম্ভব হয়নি। রাহুলকে যাঁরা ফের কংগ্রেসের সভাপতি পদে ফেরাতে চান, তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, একমাত্র প্রবীণদের ডানা ছাঁটা হলেই তিনি দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন। লোকসভা ভোটের পর সনিয়া অস্থায়ী ভাবে দায়িত্ব নিয়েও সংগঠনে তেমন নাড়াচাড়া দিয়ে উঠতে পারেননি। কিংবা বলা যেতে পারে, তিনি তা চাননি। দলের বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা বলছেন, এ রকম অবস্থা কংগ্রেসে আগে কখনও দেখিনি। বিভিন্ন সময়ে অনেক ঝড়ঝাপ্টা গিয়েছে দলের উপর দিয়ে। কিন্তু তাই বলে প্রায় আট মাস ধরে দলে কোনও স্থায়ী সভাপতি নেই, এটা অতীতে দেখা যায়নি। দক্ষিণের এক রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি শশী তারুরের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অত্যন্ত ভালো প্রস্তাব। অবিলম্বে শশীর এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া উচিত কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির। এ রকম কাণ্ডারীহীন নৌকা কতদিন চলতে পারে? দিল্লির এক নেতা আবার বলেন, একমাত্র রাহুলই পারেন ফের নেতৃত্ব দিয়ে দলকে চাঙ্গা করতে।
দিল্লির প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ বলেন, রাহুলজি চাইলেই ফিরে আসতে পারেন। কিন্তু তিনি যতদিন না ফিরছেন, ততদিন প্রবীণ নেতারা বসে একজনকে সভাপতি করতে পারছেন না?
কংগ্রেসের অন্দরের খবর, দিল্লি ভোটের পর দলের খেয়োখেয়ি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে খোদ সনিয়া খুব বিরক্ত। বিধানসভা ভোটে আপের বিশাল জয়ের পর প্রবীণ নেতা পি চিদম্বরমের মতো অনেক নেতা প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানান। তাতে আবার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখার্জি চিদম্বরমকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। সনিয়া ঘনিষ্ঠ মহলে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন নেতা বিভিন্ন সুরে কথা বলায় হাল ধরতে মাঠে নেমেছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। তিনি বলেন, নেতারা প্রকাশ্যে এত কথা বলছেন, তাঁরা দলের কাজে মন দিলে উপকার হত। সুরজেওয়ালা আগেও বিবদমান নেতাদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হয়নি। এই রাজ্যের এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বলেন, কংগ্রেসে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।

Comments are closed.