অধীরের ট্যুইট রিট্যুইট সেলিমের! বাম-কংগ্রেস জোট চূড়ান্ত, যৌথ সভা শুরু রাজ্যে

জল্পনার অবসান। ‘১৬ সালের পর বাংলার ‘২১- এর বিধানসভা ভোটে ফের বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধছে কংগ্রেস। গত বৃহস্পতিবার কংগ্রেস হাইকমান্ডের এই চূড়ান্তের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ২৪ ডিসেম্বর এক ট্যুইটে অধীর জানান, বাংলায় একুশের ভোটে বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধায় সায় দিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সেই ট্যুইট আবার রিট্যুইট করেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম। এখন বাম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতা নিয়েই চলছে জোর জল্পনা।

একুশের বিধানসভা ভোটে পাখির চোখ রেখে অনেক আগেই ময়দানে নেমে পড়ছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি।একদিকে অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা- সহ কেন্দ্রীয় নেতারা নিয়মিত ভাবে বাংলায় এসে সভা করছেন, অন্যদিকে মমতা ব্যানার্জির দলও জেলায় জেলায় সভা- মিছিল শুরু করে দিয়েছে। এতদিন প্রচারের ময়দানে প্রায় অনুপস্থিত ছিল বাম ও কংগ্রেস। জোট পাকা হয়ে যাওয়ায় রাজ্যজুড়ে যৌথ সভা করতে নামছেন অধীর চৌধুরী ও মহম্মদ সেলিমরা।
২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় বাম- কংগ্রেস জোট আরও আগে চূড়ান্ত হলে ফল আরও ভালো হতে পারত বলে ভোটের ফলাফলের পরবর্তীতে মত দিয়েছিলেন বাম ও কংগ্রেসের একাধিক নেতা। আবার ‘১৯ এর লোকসভা ভোটে শেষ মুহূর্তে এসে ভেস্তে যায় বাম- কংগ্রেস জোট। এবার আর সেই দেরি করতে চায়নি বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। অবশেষে কংগ্রেস হাইকমান্ডের ছাড়পত্র পেতেই বাম- কংগ্রেস জোট চূড়ান্ত করে ফেললেন অধীর চৌধুরীরা। শুরু হচ্ছে জেলায় জেলায় যৌথ সভা ও মিছিলের প্রস্তুতি।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল একত্রে পেয়েছিল ২১১ টি আসন। অন্যদিকে ২০০ আসনে লড়ে বামফ্রন্ট পায় মাত্র ২৬টি আসন। কংগ্রেস লড়েছিল ৯০টি আসনে। জয় পায় ৪৪টি সিটে। সম্মিলিতভাবে ৪০ শতাংশের আশেপাশে ভোট পেয়েছিল তারা। এমনকি একত্রে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবেও উঠে এসেছিল বাম ও কংগ্রেস জোট। আর আসন্ন বিধানসভা ভোটে রাজ্যের শাসক দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া বিজেপির ভোটঝুলিতে ‘১৬ সালে ছিল মাত্র তিনটি আসন। কিন্তু ‘১৯ এর লোকসভা ভোটে আলাদাভাবে লড়তে গিয়ে কংগ্রেসের জোটে মাত্র দুটি আসন। বামেদের ঝুলি ছিল শূন্য। সেখানে অপ্রত্যাশিত ভাবে রাজ্যের ৪২ টি লোকসভা আসনের ১৮টিতে জয় পেয়ে তৃণমূলের (২২) ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে বিজেপি। সেই রেশ ধরে এবার একুশের বিধানসভা ভোটে জোর প্রচার চালাচ্ছে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর গেরুয়া শিবির। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে একক ভাবে লড়ার চেয়ে ফের জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিল বাম- কংগ্রেস।
একুশের মহারণে বাম ও কংগ্রেস জোটের নিশানা এবার তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই শিবিরই। ‘১৯- এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিজেপির অভূতপূর্ব উত্থানের নেপথ্যে বামেদের ভোট গেরুয়া শিবিরে চলে যাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু বাংলায় বিজেপির শক্তি বৃদ্ধির পিছনে তৃণমূল নেত্রীই দায়ী বলে মানুষের কাছে পাল্টা প্রচার করতে চাইছে কংগ্রেস। এছাড়া নয়া কৃষি বিল, সিএএ- এনআরসি ইস্যুর মতো বিষয় নিয়ে একদিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং অন্যদিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনুন্নয়ন, বেকারত্বের মতো বিষয় নিয়ে প্রচার করবে বাম ও কংগ্রেস জোট। শনিবারই সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি ও তৃণমূলকে একই গাছের দুটি ডাল বলে আক্রমণ শানিয়েছেন মহম্মদ সেলিম। বলেন, কৃষক স্বার্থে বাম- ধর্মনিরপেক্ষ জোট সম্মিলিতভাবে লড়াই করবে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে।

Comments are closed.