আলুর নাবী ধসা বা ‘লেট ব্লাইট’ রোগ প্রতিরোধে পথ দেখাচ্ছে বাংলা।

আলু চাষের সব থেকে ক্ষতিকারক রোগ হল নাবী ধসা বা ‘লেট ব্লাইট’। সাধারণত এই রোগটি আলুকে ফলনের শেষ দিকে আক্রমণ করে ফসলের প্রভূত ক্ষতি সাধন করে। ক্ষতির পরিমাণ কখনও কখনও ১০০ শতাংশে পৌঁছয়, যার ফলে দেশে চাষীদের যথেষ্টই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এমনকী অনেক সময় তাঁরা বেছে নেন আত্মহত্যার পথও। এর নেপথ্যে দায়ী ‘Phytophthora infestans’নামক একটি ইউরোপীয় গোত্রের জীবাণু, যা সারা বিশ্বে দেখা যায়।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি  বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ সঞ্জয় গুহ রায়ের নেতৃত্বে এবং দিল্লির এক সংস্থার অর্থ সাহায্যে আলুর ‘লেট ব্লাইট’ প্রতিরোধে একটি গবেষণা করা হয়েছে। আলুর এই রোগ প্রতিরোধের জন্য গবেষক দলটি কিছু নতুন উপায় ও কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে রোগটি নির্বাহ করার কাজ চালিয়েছেন। গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন তন্ময় দে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর উইলিইয়াম ফ্রাই, ডঃ ডেভিড কুক, জেমস হুটন ইউনিভার্সিটির জিন রিস্টাইন এবং কলকাতার সুচেতা ত্রিপাঠি। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ‘Phytophthora infestans’ জীবাণুটি মূলত ইউরোপীয় গোত্রের। এই বিদেশি গোত্রের জীবাণুটির জন্যই আমাদের দেশে লেট ব্লাইট’ বা আলুর নাবী ধসা রোগটি পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর পূর্ব ভারতের বেশ কিছু রাজ্যসহ পঞ্জাবেও দেখা যায়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে যে সব ধরনের আলু হয়ে থাকে তার প্রায় অধিকাংশতেই ‘blue13’জীবাণুটি দেখা গিয়েছে, এটি আলুতে চরম মাত্রায় ক্ষতি করতেও সক্ষম। ‘Blue13’ টি ‘Phytophthora infestans’এরই একটি বিশেষ ভাগ বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। গবেষক দলের প্রধান ডক্টর সঞ্জয় গুহ রায় জানান, ‘আলুর এই রোগ শুধু ভারতে নয় গোটা বিশ্বেই দেখা গিয়েছে। রোগটি খাদ্যসম্ভারকে যেভাবে প্রভাবিত করছে তা চিহ্নিত করার কাজ এখন চলছে।
রোগটিকে প্রতিরোধের জন্য তিনটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে বলে গবেষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। রোগটির উৎস কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে এবং কীভাবে ছড়াচ্ছে তা জানা যাবে শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে। রোগের জীবাণুটি যেহেতু পরিবর্তনশীল, যার প্রতি বছরই ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে, তাই এর গতিপ্রকৃতির ওপর নজর রাখা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.