সরকার গড়তে ব্যস্ত সব রাজনৈতিক দল, পাঁচতারা হোটেলে বিধায়ক! এর মাঝেই নভেম্বরে মহারাষ্ট্রে ৩০০ কৃষকের আত্মহত্যা

মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে টানাপোড়েন থেকে কাকভোরে মহা নাটকীয় শপথ গ্রহণ। শেষ পর্যন্ত এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন শিবসেনার। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে উদ্ধব ঠাকরে। গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে গোটা দেশের নজর আটকে ছিল মহারাষ্ট্রে। কিন্তু দেশের নজর যখন মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার দিকে, ঠিক তখনই সকলের অগোচরে কৃষকের মৃত্যু মিছিল মারাঠাওয়াড়া, বিদর্ভে। খবরে প্রকাশ, কেবলমাত্র নভেম্বর মাসে মহারাষ্ট্রে আত্মঘাতী হয়েছেন ৩০০ কৃষক। মহারাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে অক্টোবর থেকে নভেম্বরে কৃষক আত্মাহুতির পরিমাণ বেড়েছে ৬১ শতাংশ।
মারাঠাওয়াড়া এবং বিদর্ভ। দেশের অন্যতম খরা প্রবণ এলাকা হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বর্ষায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ঘাটতি এমনিতেই ফসলের ক্ষতি করেছিল। কিন্তু অক্টোবরে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে ওই এলাকায়। অসময়ের বৃষ্টিতে বরবাদ ৭০ শতাংশ খরিফ শস্য। যার ধাক্কা সামলাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন অন্তত ৩০০ কৃষক। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম এত বিপুল সংখ্যক কৃষক আত্মঘাতী হলেন বলে জানা যাচ্ছে। গত বছর অক্টোবরে আত্মঘাতী হয়েছিলেন ১৮৬ জন চাষি।
অসময়ের বৃষ্টির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মহারাষ্ট্রের ১ কোটি কৃষক। যা সুইডেনের জনসংখ্যার সমান। এর মধ্যে ৪৪ লক্ষ কৃষকেরই বাস মারাঠাওয়াড়া এলাকায়। গত বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে আত্মঘাতী হয়েছেন ২,৫৩২ জন কৃষক। যা ২০১৮ সালের চেয়েও বেশি।
উদ্ভব ঠাকরের মহা বিকাশ আঘাডি সরকার ডিসেম্বরে কৃষি ঋণ মাফের ঘোষণা করে। সরকারি সূত্রের খবর, এখনও অবধি ৬,৫৫২ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ বিলি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতেও লাভ হচ্ছে না। ঠেকানো যাচ্ছে না অন্নদাতাদের মৃত্যু মিছিল। তাহলে উপায় কী?
বিদর্ভের সমাজকর্মী বিজয় জাওয়ানঢিয়া বাতলে দিয়েছেন উপায়। তিনি বলছেন, ক্ষতিপূরণ কিংবা ঋণ মাফে হবে না। সরকারের উচিত কৃষিকে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা, সেটাই আসল। বিজয়ের মতে, বিদর্ভ, মারাঠাওয়াড়ার কৃষকদের একটি খারাপ মরসুম পার করার মতো সঙ্গতি নেই। একবার ফসল নষ্ট হলে আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই তাঁদের। তাই সরকার অনেকটা দেরি হয়ে যাওয়ার আগে কৃষকদের রোজগার বাড়ানোর দিকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নজর দিক। সরকার নিশ্চিত করুক, কৃষকরা যেন ফসলের উপযুক্ত দাম পান। একমাত্র তাহলেই বাঁচানো যাবে দেশের অন্নদাতাদের।
গত বর্ষায় মারাঠাওয়াড়া এলাকায় বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতি ছিল। অন্যদিকে, পশ্চিম মহারাষ্ট্রে জুলাই-অগাস্টের অতিবৃষ্টি ৪ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। এহ বাহ্য, খরিফ মরসুমের শুরুতেই অসময়ের আকাশ ভাঙা বৃষ্টি লোকসানের ষোলো কলা পূর্ণ করে। ৯৩ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল জলের তলায় নষ্ট হয়।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে যখন বিধায়কদের ঠাঁই হয়েছে মুম্বইয়ের নামজাদা পাঁচতারা হোটেলে, ঠিক তখনই দেশের মানুষের পেট ভরানোর কারিগরদের মৃত্যু মিছিল চলছে। কিন্তু মহারাষ্ট্রের মহা নাটকে বুঁদ দেশবাসীর কান অবধিও পৌঁছল না অন্নদাতাদের শ্মশানযাত্রার কথা।

Comments are closed.