অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন যুব তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে দলের পুরনো নেতাদের নানান ক্ষোভ জমা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। জায়গায়-জায়গায় পুরনো এবং যুব তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে গণ্ডগোলও হচ্ছিল। সেই খবর পৌঁছচ্ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের কাছেও। তার সঙ্গে ছিল পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহল, আলিপুরদুয়ারসহ কিছু এলাকায় খারাপ ফল। সব মিলে দলের বর্ধিত কোর কমিটির মিটিংয়ে বৃহষ্পতিবার কড়া বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে একাধিকবার দুর্নীতি থেকে গোষ্ঠী কোন্দল থামাতে দলের নেতাদের কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এদিন যেভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুব তৃণমুল কংগ্রেসকে তিনি প্রকাশ্যেই কার্যত সতর্ক করেছেন তা ইদানীংকালে কখনই ঘটেনি। এই সতর্কবার্তা কার্যত সমালোচনার নামান্তর বলেই মনে করছে তৃণমূল শিবির। যদিও এদিনের মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না যুব তৃণমূল নেতা এবং সাংসদ অভিষেক।
পঞ্চায়েতের সমস্ত জয়ী জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য ছাড়াও দলের বিধায়ক, সাংসদরা উপস্থিত ছিলেন এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে। মখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অভিষেক এখানে নেই। তাও আমি বলছি, যুব তৃণমূল এবং তৃণমূলের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। যুব তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের মূল তৃণমূলের অধীনেই কাজ করতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে। যুব নেতারা জেলা নেতৃত্বকে উপেক্ষা করলে দল তা মেনে নেবে না। পুরনো নেতাদের গুরুত্ব দিতে হবে’।
যুব নেতাদের প্রকাশ্যেই সতর্ক করার পাশাপাশি কিছু জায়গায় পঞ্চায়েতের খারাপ ফল এবং নেতাদের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল নেত্রী। জঙ্গলহলে খারাপ ফলের জন্য শালবনীর বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোকে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহলে খারাপ ফলের জন্য ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেন তিনি। এরপরই নেতৃত্বকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘একা আমি পরিশ্রম করব, আর সবাই তার ফায়দা তুলবেন, তা চলবে না। কেউ যদি মনে করেন, তিনি দলের থেকে বড় তবে দল ছেড়ে চলে যেতে পারেন’। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে প্রচারেও কার্যত একই সুরে তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, ২৯৩ টি আসনে তিনিই প্রার্থী।
লোকসভা ভোট যখন এগিয়ে আসছে তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের বার্তার পরে দলীয় নেতৃত্বে কিছু অদল-বদলও হতে পারে বলে তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রের খবর। এদিন নাম করেই আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে স্থানীয় বিধায়ক এবং মন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি সতর্ক করেন একাধিক নেতাকে। যাদবপুর বিধানসভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অরূপ বিশ্বাসকে। পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্বে থাকছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ই। কিন্তু মুখ্যমত্রী এদিন বিভিন্ন বিষয়ে বললেও, যুব তৃণমূল কংগ্রেসকে তাঁর এই সতর্কবার্তা লোকসভা ভোটের আগে যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব।