৯ ঘণ্টা টানা জেরায় আমাদের জল পর্যন্ত খাননি! কীভাবে সিবিআইয়ের মোকাবিলা করেছিলেন মোদী? কী লিখলেন আধিকারিক

কোনও প্রশ্নের জবাব ঘোরাননি। শতাধিক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বরফের মতো ঠান্ডা মাথায়। ৯ ঘণ্টার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদে এক কাপ চাও গ্রহণ করেননি। সঙ্গে করে জলের বোতল এনেছিলেন। তা থেকে গলা ভিজিয়েছেন।

২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গায় তাঁর ভূমিকার কথা জানতে চেয়ে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তলব করেছিল গুজরাতের তৎকালীন মুখ্য মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা, কী বলেছিলেন মোদী, এবার সেই তথ্য প্রকাশ্যে এল সেই সময় সিটের প্রধান কে কে রাঘবনের লেখা বইয়ে।

কে কে রাঘবন তাঁর বইয়ে লিখেছেন, আমরা মুখ্য মন্ত্রীর দফতরে তলবের খবর পৌঁছে দিয়েছিলাম। স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, নরেন্দ্র মোদীকেই আসতে হবে। গান্ধীনগরে সিটের অফিসে মোদীকে আসতে বলা হয়। নির্দিষ্ট দিনে হাতে একটি জলের বোতল নিয়ে হাসিমুখে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্য মন্ত্রী।

অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই মামলায় স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠুক সেটা চাইনি। তাই মোদীকে জেরা করার জন্য বেছে নিয়েছিলাম সিটের আর এক সদস্য অশোক মালহোত্রাকে। তামিলনাড়ু ক্যাডারের আইপিএস অফিসার কে কে রাঘবন তাঁর বইয়ে লিখেছেন, আমার চেম্বারেই শুরু হয় জেরা পর্ব। যা চলেছিল টানা ৯ ঘণ্টা।

এই ৯ ঘণ্টার মধ্যে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে তদন্তকারীদের শতাধিক প্রশ্নের মুখে পড়েন নরেন্দ্র মোদী। রাঘবন লিখেছেন, ম্যারাথন জেরায় একবারও ধৈর্য হারাননি মোদী। ঠান্ডা মাথায় সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তাঁকে চায়ের জন্য অনুরোধ করা হলেও, খেতে চাননি। এমনকী আমাদের জল খেতেও নরেন্দ্র মোদীর আপত্তি আছে বলে মনে হয়েছিল। লিখছেন মোদীকে জেরা করা কে কে রাঘবন। নরেন্দ্র মোদী সঙ্গে করে একটি জলের বোতল এনেছিলেন। সেই বোতল থেকেই জল খাচ্ছিলেন। আমাদের দেওয়া কিছুই গ্রহণ করেননি। তবে তদন্তকারীদের ভুল পথে চালিত করার কোনও চেষ্টা সেদিন দেখিনি। তার পরেই রসিকতার সুর রাঘবনের লেখায়। আমরা কিছুতেই নরেন্দ্র মোদীকে একটা ব্রেক নেওয়ার জন্য রাজি করাতে পারিনি। তিনি বারবারই বলেছেন, সওয়াল জবাব চলুক, বিরতি দরকার নেই। কিন্তু মোদী নিজে ব্রেক না নিলে মালহোত্রাকেও যে না খেয়ে বসে থাকতে হয়! সত্যিই দারুন এনার্জি মানুষটির। লিখেছেন রাঘবন।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গুজরাত দাঙ্গা তদন্তের ক্লোজার রিপোর্ট দেয় সিট। তাতে নরেন্দ্র মোদী সহ ৬৩ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংগঠিত করার প্রমাণ মেলেনি।

Comments are closed.