নারদের বাহন ঢেঁকি এখন ডিজিটাল বাংলায় কর্মসংস্থানের নতুন দিশা দেখাচ্ছে

ঢেঁকি নাকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। যুগ-যুগান্ত ধরে মুখে-মুখে ঘুরছে এই বাংলা প্রবাদ। কিন্তু যত দিন গিয়েছে, ডিজিটাল ভারতে আধুনিক হয়েছে ঢেঁকিও।
বাঁকুড়া উন্নয়নী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্ররা বানিয়েছেন যন্ত্রচালিত ঢেঁকি। যা আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে। কিছু দিনের মধ্যেই যন্ত্রচালিত ঢেঁকি বিক্রির জন্য বাজারে আনা হবে এই কলেজের পক্ষ থেকে। এক একটি দাম হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু এই যন্ত্রচালিত ঢেঁকি ব্যবহারের কী সুবিধে?
বাঁকুড়া উন্নয়নী কলেজের চেয়ারম্যান শশাঙ্ক দত্ত thebengalstory.com কে জানালেন, ‘ঢেঁকি-ছাটা চাল আজকাল প্রায় উঠেই গিয়েছে। তার প্রধান কারণ, ঢেঁকি-ছাটা চাল তৈরি করতে অনেক কষ্ট এবং যা সময়সাপেক্ষ, তাতে তা লাভজনক হয় না। অথচ এই ঢেঁকি-ছাটা চাল বা ব্রাউন রাইস অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। বাঁকুড়া জেলায় ইতিমধ্যেই এই যন্ত্রচালিত ঢেঁকিতে তৈরি হচ্ছে ব্রাউন রাইস। যার খাদ্যগুণ বাজারের দামি পালিশ করা চালের থেকে অনেক বেশি’।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও এই ঢেঁকি-ছাঁটা বাদামি চাল বা ব্রাউন রাইস নিয়ে বিশেষ উৎসাহ দেখানো হয়েছে। বাঁকুড়া জেলার ছাতনা ব্লকের প্রায় ১০০টি স্বনির্ভর দলের মহিলাদের উদ্যোগে ব্রাউন রাইসকে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অ্যাগ্রো ইন্ড্রাসট্রিজের  ভাইস চেয়ারম্যান শুভাসিস বটব্যালের উদ্যোগে এই  কাজ চলছে। বাঁকুড়া উন্নয়নী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপকদের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে তাঁদের ছাত্রদের বিশেষ উদ্ভাবন যন্ত্রচালিত ঢেঁকি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। এই ঢেঁকি মাত্র এক ঘন্টায় এক ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করে ১৫ থেকে ১৬ কেজি ব্রাউন রাইস বানিয়ে ফেলতে পারে। খুব সামান্য বিনিয়োগ করে প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘন্টায় এক কুইন্টাল ব্রাউন রাইস বানানো সম্ভব। স্থুলতা, ডায়াবেটিস,ক্যান্সার-এর মত রোগে এখন পালিশ করা বাজার চলতি চালের জায়গায় চিকিৎসকরা ব্রাউন রাইস খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

যন্ত্রচালিত ঢেঁকি

বাঁকুড়া উন্নয়নী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কলকাতার একটি স্বেছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত কিছু গ্রামে তিনটি যন্ত্রচালিত ঢেঁকি দেওয়া হয়েছে। এতে উপকৃত হচ্ছেন সেখানকার মহিলা স্বনির্ভরগোষ্ঠীর প্রায় ৩০টি পরিবার। আরও ৪০টি পরিবারের কাছেও কিছু দিনের মধ্যে যন্ত্রচালিত ঢেঁকি পৌছে দেওয়া হবে বলে জানালেন শশাঙ্কবাবু। পাশাপাশি বাঁকুড়ার ছাতনাতেও ১০০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে বিনামূল্যে তাঁদের কলেজের ছাত্রদের তৈরি ঢেঁকি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর বক্তব্য, এই সুস্বাদু ঢেঁকি-ছাটা চাল খুব তাড়াতাড়ি কলকাতার বিভিন্ন বাজারে মিলবে। দক্ষিণবঙ্গের একটি ছোট্ট জেলার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র-অধ্যাপকরা এখন গ্রামীণ অর্থনীতিতে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নিজেদের উদ্ভাবনের সাহায্যে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.