সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃত ঘোষণা, মুম্বইয়ে কোভিড জয় করে ঘরে ফিরলেন চিকিৎসক

করোনা অতিমারির সময় মানুষের সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরতা বিশ্বে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। ভারতেও লকডাউন পর্বে মধ্যবিত্তের সময় কাটানোর একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। যে কোনও খবর ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে সেখানে। তা নিয়ে মাতামাতি কিংবা অভিযোগের তরজা। সব মিলিয়ে ভারতীয় জনগণের সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরতা রাতারাতি বহু গুণ বেড়েছে। কিন্তু এই অগ্রগতির কিছু খারাপ দিকও পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।
মুম্বইয়ের অন্যতম বিখ্যাত জেনারেল ফিজিশিয়ান ডক্টর বসন্ত শেনোয়। থাকেন মুম্বইয়ের পশ্চিম শহরতলি স্যান্টাক্রজের দিকে। ৩ সপ্তাহ করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে সদ্য বাড়ি ফিরেছেন ডাক্তারবাবু। কিন্তু এই মুহূর্তে ডাক্তারবাবু ব্যস্ত সম্পূর্ণ অন্য কারণে। মানুষের জিজ্ঞাসা মেটাতে ঘাম ছুটছে সদ্য হাসপাতাল ফেরত বসন্ত শেনোয়ের।
গত ২৮ মে ডাক্তারবাবু শরীরে অক্সিজেনের অভাব টের পান। মেপে দেখেন অত্যন্ত কম। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু ডাক্তারদের ফোন, কী করব? বন্ধুরা বলেন সময় নষ্ট না করে বরং কোথাও ভর্তি হয়ে যাও। কিন্তু তারপরেই শুরু আসল সমস্যা। মুম্বইয়ের অন্যতম সেরা চিকিৎসক নিজের সমস্ত প্রভাব দিয়েও একটি বেড জোগাড় করতে ব্যর্থ হন। এর মধ্যে কেটে গিয়েছে মূল্যবান সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার খবর।
শেষ পর্যন্ত মেয়ে ও স্ত্রীর কথায় স্থানীয় বিধায়ক অমিত সতমকে ফোন করেন বসন্ত শেনোয়ের স্ত্রী। ব্যবস্থা হয় বেড ও অ্যাম্বুলেন্সের। আন্ধেরি ওয়েস্টের ব্রহ্মকুমারী গ্লোবাল হসপিটালে ভর্তি করা হয় ডাক্তারবাবুকে। আইসিইউতে নিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা।
এদিকে চারদিকে তখন রটে গিয়েছে, ডাক্তারবাবুর মৃত্যু হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশের ঢল, বসন্ত শেনোয়ের স্ত্রী এবং মেয়ে, যাঁরা দুজনেই পেশায় চিকিৎসক, তাঁদের ফোনেও ক্রমাগত আসতে থাকে শোকবার্তা। অথচ ডাক্তারবাবু তখন জীবিত এবং চিকিৎসা চলছে। মা-মেয়ে মিলে এই গুজবের পর্দাফাঁসের ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। লাভ হয়নি। তাঁরা বলছেন, কেউ যেন মানতেই রাজি নন, তিনি চিকিৎসাধীন। ডাক্তারবাবুর মেয়ে প্রিয়াঙ্কার কথায়, সবাই ধরে নিয়েছে যে রটনা সত্যি!
সপ্তাহ তিনেকের নাছোড় লড়াইয়ের পর সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন বসন্ত শেনোয়। তারপর মেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন এক মস্ত বড় পোস্ট। তাতে গুজবে জল পড়েছে ঠিকই কিন্তু তাতেও বিপত্তি। এতদিন হাসপাতালে থাকায় নিজের মোবাইলটি বন্ধ রেখেছিলেন বসন্ত শেনোয়। বাড়ি ফিরে ফোন অন করতেই, সেখানেও শোকবার্তার ঢল। মুচকি হাসেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি বসন্ত শেনোয়। অনেকেই যে ডাক্তারবাবুর মৃত্যু হয়েছে ভেবে তাঁর কাছেই দুঃখপ্রকাশ করে ফেলেছেন!

Comments are closed.