রাম নেপালি, জন্ম হয়েছিল কাঠমান্ডু থেকে ১৩৫ কিমি দূরের বীরগঞ্জে, ম্যাপ বিতর্কের পর ভারতকে নয়া বার্তা নেপালের প্রধানমন্ত্রীর

রাম জন্মভূমি হিসেবে ফৈজাবাজ জেলার অযোধ্যায় গড়ে উঠতে চলেছে রাম মন্দির। এই অবস্থায় রাম নিয়ে নয়া বিতর্কের জন্ম দিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। বললেন, রাম আসলে নেপালি এবং অযোধ্যা বলে যে জায়গায় তাঁর জন্ম, তা আদতে নেপাল-বিহার সীমান্তের একটি ছোট গ্রাম।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির কথায়, আমরা এখনও বিশ্বাস করি শুধু সীতা নয়, আমরা রামকেও দিয়েছি। এই অযোধ্যা ভারতে নয়, নেপালে। অযোধ্যা আসলে বীরগঞ্জ জেলার পশ্চিমে একটি ছোট গ্রাম। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে যার দূরত্ব মাত্র ১৩৫ কিলোমিটার। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, নিজের সুবিধার জন্য ভারত ইতিহাস বদলে দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল, আচমকা নেপালের এমন রাম-দাবি কেন? কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এর মধ্যে অন্য উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁদের একাংশের বক্তব্য লিম্পিয়াধুরা, লিপুলেখ ও কালাপানিকে নিজেদের রাজনৈতিক মানচিত্রে দেখানোর মধ্যে দিয়ে নেপাল ভারতকে প্রথম বার্তা দিয়েছিল। তারপর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন আইনে সংশোধন ছিল এই প্রক্রিয়ার কার্যত দ্বিতীয় ধাপ। ভারতের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস ছড়ানোর চাঞ্চল্যকর অভিযোগও করেছিলেন ওলি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নেপালের উপর ক্রমাগত বেড়ে চলা চিনের প্রভাবই রয়েছে এর নেপথ্যে। ভারত-নেপাল সম্পর্কের নয়া সমীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে চিন। এই পরিস্থিতিতে ক্রমাগত ভারত বিরোধী বিতর্ক তৈরি করে চলেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি।
তবে নেপালের এমন চিন ঘনিষ্ঠতার প্রেক্ষিতে চুপ করে বসে নেই ভারতও। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি ওলিকে সরানোর জন্য প্রবল চাপ তৈরি করছে। প্রচণ্ড নিজে হস্তক্ষেপ করছেন বিষয়টিতে। পর্যবেক্ষকদের অনুমান, সর্বক্ষেত্রে ভারতের উপর নির্ভরশীল নেপালের জনসাধারণের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতেই এবার স্পর্শকাতর রামকে হাতিয়ার করলেন ওলি।
ঠিক কী বলেছেন কে পি শর্মা ওলি? নেপালি কবি ভানুভক্তের ২০৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি দাবি করেন, ভারত নয়, নেপালেই জন্ম নেন রামচন্দ্র। ফৈজাবাদের অযোধ্যা অনেক পরে তৈরি, রাম নেপালের বীরগঞ্জের অযোধ্যা নামে গ্রামে জন্ম নেন। ভারত নিজের সুবিধার জন্য রাম ও অযোধ্যাকে ভারতীয় বলে দাবি করে।
ওলির দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন অযোধ্যার রাম মন্দির ট্রাস্টের সদস্য মহন্ত দীনেন্দ্র দাস। তাঁর দাবি, ভগবান রামের জন্ম সরযূ নদীর তীরে এই অযোধ্যায়। তবে হ্যাঁ, সীতাজির জন্ম নেপালে। কিন্তু ভগবান রামও নেপালে জন্মেছিলেন বলে দাবি করা অন্যায়। আমি প্রধানমন্ত্রী ওলির মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছি।
ভারতে বর্তমানে ক্ষমতায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বিজেপির সেই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ বলে মনে করা হয় রাম মন্দিরকে। সম্প্রতি রাম মন্দির নির্মাণের ছাড়পত্রও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এই অবস্থায় ভারতের শাসক দলের আস্তিনে সবচেয়ে স্পর্শকাতর ইস্যু রামকে টেনে ভারত বিরোধিতা উসকে দিতে চাইলেন একদা বিশ্বের একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি।

Comments are closed.