৯ জুলাই থেকে বৃহত্তর কনটেইনমেন্ট জোনে কী করা যাবে, কী যাবে না? হোম ডেলিভারি হবে? দরকারে কোন নম্বরে ফোন করবেন? জেনে নিন বিস্তারিত তথ্য

৯ জুলাই, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা থেকে কলকাতা সহ রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় ফের শুরু হচ্ছে লকডাউন। আনলক পর্বে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতেই এই পদক্ষেপ নবান্নের। তবে নয়া লকডাউন পর্বের জন্য নিয়মের কিছু অদলবদল করা হয়েছে। বদলে গিয়েছে কনটেইনমেন্টের সংজ্ঞাও। এক নজরে দেখে নিন, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে চলা নব পর্যায়ের লকডাউনে কীসের উপর থাকছে বিধিনিষেধ।

 

কী কী বদল? 

শহরের মধ্যে কোনও ছোট এলাকা থেকে একাধিক সংক্রমণের ঘটনা ঘটলে সেখানে নতুন করে লকডাউন জারি হবে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছিল। কনটেইনমেন্টের বহরও কমিয়ে আনা হয়েছিল।
এর আগে প্রশাসন শুধুমাত্র পজিটিভ কেসের ঠিকানা (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) সিল করে দিচ্ছিল। কিন্তু আশেপাশের মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু ৭ জুলাই, মঙ্গলবারের নবান্নের নির্দেশিকা বলছে বৃহত্তর কনটেইনমেন্ট জোনের কথা।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, বর্তমান কনটেইনমেন্ট জোনের সঙ্গে মিলে যাবে বর্তমান বাফার জোন। দুইয়ে মিলে তৈরি হবে বৃহত্তর কনটেইনমেন্ট জোন। এই বৃহত্তর কনটেইনমেন্ট জোনে কঠোর লকডাউন চলবে।
স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন ব্যানার্জির সাক্ষর করা সরকারি নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা আছে, কনটেইনমেন্ট জোনের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি সমস্ত অফিস, জরুরি পরিষেবা নয় এমন কাজ, জমায়েত, গণপরিবহণ, সমস্ত মার্কেটিং, শিল্প সংস্থা বা বাণিজ্যিক সংস্থার কাজকর্ম বন্ধ থাকবে।

 

বাফার এরিয়া কী? 

কলকাতা পুরসভা জানাচ্ছে, বাফার এরিয়া বিভিন্ন এলাকা ভেদে বদলে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, কোনও হাউজিং কমপ্লেক্সের একটি ফ্ল্যাট থেকে সংক্রমণের খবর পাওয়া গেলে বাফার এলাকা হবে গোটা হাউজিং কমপ্লেক্সটি। আর যদি সংক্রমিত একটি স্ট্যান্ড অ্যালোন বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা হন, সেক্ষেত্রে চারপাশের ১০ টি বাড়ি বাফার এলাকার মধ্যে পড়বে। যদি কোনও ঘিঞ্জি বা বস্তি এলাকায় কোনও সংক্রমিতের সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে? পুরসভা জানাচ্ছে সেক্ষেত্রে পুরো বস্তিটিকেই বাফার এরিয়া হিসেবে ধরা হবে।
মঙ্গলবার নবান্নের নির্দেশিকা বলছে, এবার থেকে বাফার জোন আলাদা করে হবে না। তার বদলে তা বৃহত্তর কনটেইনমেন্ট জোনের অন্তর্গত হবে। ফলে কনটেইনমেন্টে লকডাউনের যে নির্দেশিকা তা বৃহত্তর কনটেইনমেন্ট জোনেও কঠোরভাবে পালিত হবে।

 

আমার বাড়ি কিংবা অফিস কনটেইনমেন্ট জোনের মধ্যে পড়ছে কিনা কীভাবে জানবো? 

মঙ্গলবার জারি করা সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতিটি জেলার বৃহত্তর কনটেইনমেন্ট জোনের তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলার সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এছাড়াও এগিয়ে বাংলা ওয়েবসাইটে তথ্য পাওয়া যাবে এই ঠিকানায়, https://www.wb.gov.in/index.aspx
এগিয়ে বাংলা ওয়েবসাইটের হোমপেজে গিয়ে কনটেইনমেন্ট জোনের জেলাওয়াড়ি তালিকায় ক্লিক করুন। সেখানে নিজের জেলা বেছে নিয়ে দেখুন আপনার বাড়ি বা অফিস কনটেইনমেন্ট জোনের মধ্যে পড়ছে কিনা।
কলকাতা পুর এলাকার কনটেইনমেন্ট জোনের তালিকা কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (KMC) এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। https://www.kmcgov.in/KMCPortal/jsp/KMCPortalHome1.jsp
হোম পেজের ডান দিকে ফিরহাদ হাকিমের ছবির ঠিক নীচে ক্যুইক লিঙ্কের মেনু দেওয়া আছে। সেখানে প্রথম বিষয় কলকাতা কনটেইনমেন্ট এরিয়া। সেখানেই শহরের সমস্ত কনটেইনমেন্ট জোনের তালিকা মিলবে।

 

কলকাতায় কতগুলো কনটেইনমেন্ট জোন? 

কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন ২৮। যদিও ১ জুলাই প্রকাশিত লিস্টে কলকাতা পুর এলাকায় ছিল ১৮ টি কনটেইনমেন্ট জোন। বুধবার ও বৃহস্পতিবার পরিবর্ধিত তালিকা নিয়ে আলোচনার পর নয়া তালিকা প্রকাশিত হবে বলে পুরসভা সূত্রে খবর।

 

কনটেইনমেন্ট জোনে কী করা যাবে, কী করা যাবে না? 

লকডাউনের প্রথম পর্বে মানুষের যাতায়াতের উপর বিধিনিষেধ ছিল। জরুরি কাজ ছাড়া কনটেইনমেন্ট জোনে ঢোকা-বেরোনো যাচ্ছিল না। নয়া পর্বের লকডাউনেও তেমনই বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বলে প্রাথমিকভাবে প্রশাসন সূত্রে খবর। কনটেইনমেন্ট জোনে উপযুক্ত কারণ ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোনো যাবে না। প্রাইভেট গাড়ি বের করা যাবে না। পাড়া কিংবা বাজারে অযথা ঘোরাঘুরি করার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বাড়ির বাইরে বেরোলে মাস্ক বাধ্যতামূলক।

 

কাজের লোকের আসা-যাওয়ায় ছাড় আছে কি? 

প্রথম পর্বের লকডাউনের সময় কাজের লোকেদের আসা-যাওয়ার উপর বিধিনিষেধ ছিল। নয়া লকডাউনের ক্ষেত্রেও একই জিনিস হতে পারে। তবে সর্বত্র নয়, কেবলমাত্র কনটেইনমেন্ট জোনগুলোতে তাঁদের যাতায়াত বন্ধ হতে পারে। সেক্ষেত্রে রান্না কিংবা বাড়ির অন্যান্য কাজকর্ম ফের নিজেকেই করতে হতে পারে।

 

অনলাইনে খাবার কিংবা অন্যান্য জিনিস অর্ডার করা যাবে? হাতে পাবো কী করে? 

প্রশাসন কনটেইনমেন্ট জোনকে গার্ড রেল দিয়ে ঘিরে দিচ্ছে। তা টপকে বাইরে যাওয়া কিংবা ভিতরে আসা নিষিদ্ধ। এই অবস্থায় কনটেইনমেন্ট এলাকার কেউ অনলাইনে খাবার অর্ডার করলে, ডেলিভারিম্যান ওই গার্ড রেল অবধি আসতে পারবেন। সেখান থেকে খাবার গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু কনটেইনমেন্ট জোনে তো বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ। তাহলে কী করে হাতে পাবেন অর্ডার দেওয়া খাবার? সেক্ষেত্রে কর্তব্যরত পুলিশের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ব্যারিকেড থেকে খাবার আনতে হবে। কিংবা পুলিশকেই অনুরোধ করতে হবে খাবার হাতে তুলে দেওয়ার।
করোনা সংক্রমিত কোনও ব্যক্তি বা তাঁর বাড়ির লোক, যাঁরা হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন, এসব ক্ষেত্রে তাঁদের নির্ভর করতে হবে সহৃদয় প্রতিবেশী কিংবা পুলিশের উপর। যাতে তাঁরা অর্ডার করা জিনিস ঘরে বসেই হাতে পান।

 

দরকারে কাকে ফোন করবেন? 

কনটেইনমেন্ট জোনে থাকা মানুষেরা যে কোনও দরকারে ১০০ ডায়াল করবেন। স্থানীয় থানার সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাও মদত করতে প্রস্তুত। আগের লকডাউন পর্বে পুলিশ সাধারণ মানুষকে এভাবে বিভিন্নরকম সাহায্য করেছে। কনটেইনমেন্ট এলাকার মধ্যে যাঁদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে সমস্যা, তাঁদের খাবারও সরবরাহ করেছে পুলিশ। এবারও তার অন্যথায় হবে না বলে লালবাজার সূত্রে খবর।

Comments are closed.