এআই: সঙ্কটে প্রথাগত চাকরি, তৈরি হচ্ছে নতুন পেশা, খুলে যাবে কর্মসংস্থানের নব দিগন্ত

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বর্তমান দুনিয়ায় এআই নিয়ে মাতামাতি নতুন স্তরে পৌঁছেছে। এমন দিন নিকটবর্তী, যখন আপনার-আমার অফিসের কাজ নিখুঁতভাবে এক লহমায় করে দেবে অটোমেশন। অর্থাৎ কাজের ক্ষেত্রে আমার আপনার প্রয়োজন ফুরোনোও, এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বহুল ব্যবহার ভারতের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বিপুল সংখ্যক মানুষকে রাতারাতি কর্মহীন করে দিতে পারে। একই কথা বলছেন অন্যান্য অর্থনীতিবিদরাও।

২০১৭ সালের ২০ শে অগাস্ট ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত Artificial intelligence imperils India Inc jobs শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, শুধুমাত্র অটোমেশনের কারণে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ৬.৪ লক্ষ মানুষ চাকরি হারাবেন। এই বিপুল পরিমাণ কর্মী বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে অপেক্ষাকৃত কম দক্ষতা সম্পন্ন কাজে যুক্ত রয়েছেন। এই প্রবন্ধ প্রকাশের পর কেটে গিয়েছে ২ বছরেরও বেশি সময়। এই পরিস্থিতিতে একটি নতুন পথেরও হদিশ দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মসংস্থানের সঙ্কোচনের পাশাপাশি তৈরি হবে এমন কিছু নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র, যা এখনও পর্যন্ত অভূতপূর্ব। ২০১৭ সালেরই ১৪ ই ডিসেম্বর ইংরেজি সংবাদপত্র বিজনেস টুডেতে প্রকাশিত Artificial Intelligence effect: 5 years from now, 54 million Indians will hold jobs unheard of today শীর্ষক প্রতিবেদনে সেই বিকল্প পথেরই সন্ধান দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ফিকি, ন্যাসকম এবং ইওয়াইয়ের যৌথ উদ্যোগে ‘ফিউচার অফ জবস ইন ইন্ডিয়া’ রিপোর্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে। এই রিপোর্ট জানিয়েছিল, ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে সংগঠিত নির্মাণ এবং সমতুল শিল্প সংস্থায় কর্মসংস্থান ৩৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে হবে ৪৬-৪৮ মিলিয়ন। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, যে নতুন নতুন কাজের উদ্ভবের কথা বলা হচ্ছে, তা আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে সামগ্রিক কর্মসংস্থানের ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত দখল করে নিতে পারে। গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালে গবেষণা সংস্থা গার্টনারের পূর্বাভাস ছিল, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে ২০২০ সালের মধ্যে যেমন ১.৮ মিলিয়ন চাকরি কমে যাবে, ঠিক তেমনই নতুন ২.৩ মিলিয়ন চাকরি তৈরিও হবে। বিজনেজ টুডের প্রতিবেদনে এই প্রেক্ষিতেই উল্লেখ করা হয়েছে কগনিজেন্টের শ্বেতপত্রের কথা। যেখানে আগামী এক দশকে এমন ২১ টি চাকরির কথা বলা হয়েছে, যেগুলো কর্মসংস্থানের মানচিত্রকেই পুরোপুরি বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই ২১ ধরনের চাকরির কথা আগে শোনেননি মানুষ। কী সেই অভূতপূর্ব চাকরিক্ষেত্র, যা এআইয়ের রমরমার মাঝেও বিপুল সংখ্যক মানুষকে কর্ম সংস্থান দেবে? ‘ম্যান মেশিন টিমিং ম্যানেজার’ অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নির্ধারণ করবে যে মানব মস্তিষ্ক। ‘এআই বিজনেস ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার’ বা এআইয়ের বাজারমূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছতে যাঁরা সহায়তা দেবেন। ‘এআই অ্যাসিস্টেড হেলথ কেয়ার টেকনিশিয়ান’দের অন্তর্ভুক্তি ভারতের মতো দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপ্লব আনতে পারে। এক্ষেত্রে অপারেশন থিয়েটারে একজন এআই টেকনিশিয়ান জটিল থেকে জটিলতর অস্ত্রোপচার সারবেন নির্ভুলভাবে। এছাড়াও আরও ‘ব্রিং ইয়োর ওন আইটি ফেসিলিটেটর’ (বিওয়াইওআইটিএফ), ‘ডেটা ডিটেক্টিভ’ সহ একাধিক নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রের কথা বলা হয়েছে শ্বেতপত্রে, যেগুলো মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশনকে নিয়ন্ত্রণ এবং নির্ধারণের কাজ করবে।

অর্থাৎ একটা বিষয় পরিষ্কার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা অটোমেশনের ফলে একদিকে যেমন বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মচ্যুত হবেন, ঠিক তেমনই তৈরি হবে কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র। যা অদূর ভবিষ্যতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে।

 

Comments are closed.