পুরুলিয়ায় মৃত দুই বিজেপি কর্মীর মধ্যে দ্বিতীয়জন আত্মহত্যা করেছেন, দাবি পুলিশের। রাজ্যকে মানবাধিকার কমিশনের নোটিশ।
পুরুলিয়ায় মৃত দুই বিজেপি কর্মীর মধ্যে প্রথম জনের মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট না হলেও দ্বিতীয়জন আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। সূত্রের খবর শনিবার উদ্ধার হওয়া দুলাল কুমারের মৃতদেহের জরুরি ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার প্রমাণ মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে প্রথমজনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট শনিবার পর্যন্ত মেলেনি।
এদিকে, পুরুলিয়ার বলরামপুরে বিজেপি কর্মী’র রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারকে নোটিশ পাঠালো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণদিত ভাবে শুক্রবার, ১ জুন, কমিশনের তরফে রাজ্যকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩০ মে পুরুলিয়ার বলরামপুরে ত্রিলোচন মাহাতো নামে বছর আঠারোর এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বিজেপির অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই তাঁকে খুন করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি পোস্টারেও এই কথা লেখা ছিল। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যেদিন রাজ্যকে নোটিশ পাঠিয়েছে, সেদিনই (শুক্রবার) বলরামপুরে আরও এক বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম দুলাল কুমার। তাঁকেও খুন করা হয়েছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে বিজেপি। দু’টি ঘটনারই সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য।
জাতীয় মহিলা কমিশনের তরফে রাজ্যের মুখ্য সচিবের উদ্দেশ্যে জারি করা এই নোটিশে চার সপ্তাহের মধ্যে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজি’কে তদন্ত প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। মৃত ত্রিলোচন মাহাতো যে দলিত সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন তা চিঠিতে উল্লেখ করে কমিশন বলেছে, ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই স্বতঃপ্রণদিত হয়ে নোটিশ পাঠনোর মধ্যেও রাজনীতি দেখছে রাজ্যের শাসক দল। রাজ্য পুলিশের বক্তব্য, দু’টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনারই তদন্ত চলছে। এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও সূত্র মেলেনি।
এই দুই রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক চাপান-উতোর। গত ৩০ মে ত্রিলোচণ মাহাতোর মৃত্যুর পরই বিজেপির সর্বভারতীয় অমিত শাহ ট্যুইট করেছিলেন, রাজ্যের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের থেকে ভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় তাঁকে খুন হতে হয়েছে। শুক্রবারের ঘটনার পর ট্যুইট করেছেন তৃণমূল রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েনও। দুটি ঘটনারই তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তাঁর দাবি সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে দুষ্কৃতীদের শাস্তি দিতে হবে। ঝাড়খণ্ড সীমানা ঘেঁষা এই এলাকায়, এই দুই ঘটনার সঙ্গে বজরং দল, মাওবাদী বা বিজেপির কোনও যোগ রয়েছে কিনা তাও সঠিক তদন্তের পর জানা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ডেরেক।