ছয় নোবেলজয়ীর শিকড় জড়িয়ে কলকাতার সঙ্গে! অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বীকৃতি শহরের মুকুটে নয়া পালক

সোমবারই ঘোষিত হয়েছ চলতি বছরে অর্থনীতিতে নোবেল প্রাপকদের নামের তালিকা। অমর্ত্য সেনের পর এবছর আবার অর্থনীতিতে নোবেল পাচ্ছেন শহর কলকাতারই আরেক কৃতী বাঙালি অধ্যাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপ্যায়। বর্তমানে আমেরিকা নিবাসী হলেও অভিজিৎকে আদতে কলকাতার ছেলেই বলা যায়। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি এ শহরেই। তাঁর অভিভাবকরাও কলকাতাতেই থাকেন।
জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, পড়াশোনো তাঁর সবই এই শহরে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুল থেকে। অর্থনীতিতে স্নাতক হয়েছেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। অভিজিতের বাবা এবং মা দু’জনেই অর্থনীতির অধ্যাপক। তাই কলকাতার সঙ্গে নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদের যোগটি যে নিবিড় তা বলাই চলে।
তবে শুধু অভিজিৎই নন, রবীন্দ্রনাথ থেকে মাদার টেরেসা, অমর্ত্য সেন, মোট ছয় নোবেল প্রাপকের শিকড় কিন্তু জড়িয়ে এই শহর কলকাতার সঙ্গেই। হয় জন্মসূত্রে, নয়ত কর্মসূত্রে তাঁরা জড়িয়ে আছেন এই আমার আপনার প্রাণের শহর কলকাতার সঙ্গে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক তাঁদের কলকাতা যোগ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শুধু প্রথম ভারতীয় হিসেবেই নয়, প্রথম অ-ইউরোপিয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং প্রথাগত শিক্ষার বেশ কিছুটা সম্পন্ন হয়েছিল কলকাতাতেই। তাঁর রক্তে ছিল শহরের জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বনেদিয়ানা।

সি ভি রমন: ১৯৩০ সালে পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পেয়েছিলেন চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন। তিনিই ছিলেন এশিয়ার প্রথম ব্যক্তি যিনি বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন। মাদ্রাসের প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর ১৯১৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯০৭ সাল থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্ত ছিলেন কলকাতার বউবাজারস্থিত ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন সায়েন্স-এর সঙ্গে। এখানেই আবিস্কার হয় তাঁর বিখ্যাত ‘রমন এফেক্ট’। যার জন্য পরবর্তীকালে তিনি নোবেল সম্মানে সম্মানিত হন। ‘ক্যালকাটা সাউথ ইন্ডিয়ান ক্লাব’এর প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন তিনি।

মাদার টেরেসা: সুদূর ইউরোপের আলবেনিয়াতে জন্ম হলেও মাদার টেরেসা তাঁর গোটা সমাজকল্যানমূলক কাজই কিন্তু চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এই কলকাতা থেকে। এবং তাঁর এই কাজের জন্য নোবেল শান্তি সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন মাদার। ১৯৫০ সালে মিশনারিজ অফ চ্যারিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। মাদারের নেতৃত্বে প্রায় বিশ্বজুড়ে চলা এই সামাজিক সংগঠনটির কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হত এই শহর থেকে। সমাজের অসহায়, আশ্রয়হীন, দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে মাদারের এই প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতাতেই প্রয়াত হন মাদার টেরেসা।

অমর্ত্য সেন: নোবেলজয়ী আরও এক প্রখ্যাত বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। শান্তিনিকেতনে জন্ম এবং দেশেভাগের আগে ওপার বাংলার ঢাকাতে কেটেছে তাঁর শৈশব জীবনের কিছু বছর। দেশভাগের পর অমর্ত্যের পরিবার ফিরে আসেন শান্তিনিকেতনে। এরপর শান্তিকেতন এবং কলকাতাতেই কেটেছে তাঁর শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলি। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে হয়েছিলেন অর্থনীতির স্নাতক। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত নিজের কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় ব্রিটেন এবং আমেরিকাতে কাটালেও পরে তিনি কলকাতাতেই ফিরে আসেন। ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনীতির জন্য নোবেল সম্মান পান।

রোনাল্ড রস: ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ১৯০২ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান রোনাল্ড রস। বিদেশে জন্মগ্রহণ করলেও ১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ আমলে তিনি কলকাতায় আসেন। তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ড এবং গবেষণা এই শহরেই।

Comments are closed.