অক্সফোর্ডের করোনা টিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু পুণেতে, অংশ নিলেন এক চিকিৎসক ও পিএইচডি পড়ুয়া

পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ায় (SII) শুরু হল করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে অংশ নিলেন এক চিকিৎসক ও পিএইচডি পড়ুয়া।

এখনও পর্যন্ত যে সব সম্ভাব্য করোনা টিকার কথা শোনা গিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম অক্সফোর্ডের কোভিড টিকা। ভারতে এই টিকা তৈরী করছে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট। মানুষের ওপর এই টিকার কার্যকারিতা জানতে শুরু হল দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। বুধবার ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিলেন এক চিকিৎসক। জানা গিয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য বুধবার পুনের ভারতী বিদ্যাপীঠ মেডিক্যাল কলেজে প্রথম যে দুই স্বচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে একজন পুনের একটি বেসরকারি হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। ওই চিকিৎসকের বয়স ৪৮ বছর। বছর দশেক আগে সোয়াইন ফ্লু-র ভ্যাকসিন প্রস্তুতিতেও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। তিনি জানান, বছর দশেক আগে তাঁর ১১ বছরের মেয়েও H1N1 ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশ নিয়েছে। এছাড়া সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের ভ্যাকসিন ট্রায়ালেও অংশ নেন তাঁর কন্যা। তারপর করোনা অতিমারির সময়ও তাঁরা ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। স্ত্রী ও কন্যা ভাইরাস ও অ্যান্টিবডি টেস্ট পাশ করতে পারলে পরিবারের তিনজনই ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবেন। এছাড়া ৩২ বছরের এক পিএইচডি পড়ুয়া স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিয়েছেন ট্রায়ালে। পড়াশোনার জন্য আওরঙ্গাবাদে থাকা ওই যুবক একটি কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তিনি জানান, যে ভাইরাস লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়েছে তার বিরুদ্ধে এবং মানুষের পাশে দাঁড়াতে ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন তিনি।

ব্রিটিশ ফার্মা সংস্থা ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র সঙ্গে যৌথভাবে ভ্যাকসিন তৈরি করার পাশাপাশি দেশীয় সংস্থা ‘ভারত বায়োটেক’ তৈরি করছে ‘কোভ্যাক্সিন।’ সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া আশা করছে, ২০২০ সালের শেষে মাসে ১০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে।

ভারতী বিদ্যাপীঠের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডিরেক্টর ডাক্তার সঞ্জয় লালওয়ানি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে বেছে নেওয়া হয়েছে, যাঁদের ওপর এই ট্রায়াল চলবে। এঁদের প্রত্যেকের মেডিক্যাল রিপোর্ট স্বাভাবিক। কারোরই করোনা পজেটিভ নয়।

সংবাদসংস্থা পিটিআইকে তিনি জানান এই হাসপাতাল কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক চাইছে, যারা করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অংশ নিতে ইচ্ছুক। তাঁদের বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৯৯ বছরের মধ্যে। হাসপাতালের আর এক শীর্ষ আধিকারিক ডাক্তার জীতেন্দ্র ওসওয়াল জানান, ভ্যাকসিন শরীরে প্রবেশ করার পর স্ট্যান্ডার্ড ট্রায়াল প্রোটোকল মেনে এঁদের পর্যবেক্ষণ করা হবে। পুনে ছাড়াও এই ট্রায়াল চলবে দেশের আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতালে। যার মধ্যে রয়েছে পুনের বি জে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এইমস দিল্লি, পাটনার রাজেন্দ্র মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস, চন্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন, গোরখপুরের নেহেরু হসপিটাল, বিশাখাপত্তনমের অন্ধ্র মেডিক্যাল কলেজ। ইতিমধ্যে ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ChAdOx1 nCoV-19 বা AZD1222 এর চূড়ান্ত পর্যায়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গত মাসে ঘোষণা করেছিলেন কোভিড ১৯ এর বিরুদ্ধে তাদের প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে ‘ডুয়াল ইমিউনো রেসপন্স’ পাওয়া গিয়েছে। যাকে আশার আলো হিসেবেই দেখছেন দুনিয়ার গবেষকরা।

Comments are closed.