ওষুধ থেকে খাদ্য সামগ্রী ঠান্ডা রেখে প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছানোর জন্য বাজারে আসছে ব্যাটারিচালিত পোর্টেবল ফ্রিজ।

গরমকালে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় খাবার-দাবার থেকে শুরু করে প্রাণদায়ী ওষুধ, ইনজেকশন ঠিকমতো মজুত করে রাখাই একটা বড় সমস্যা। তার বড় কারণ গ্রামাঞ্চলের বহু জায়গায় এখনও ফ্রিজের অভাব। তার চেয়েও বড় কথা, ফ্রিজ থাকলেও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে দেশের বহু প্রান্তিক এলাকায়। ফলে অনেক সময়ই মজুত করা যায় না বলে প্রাণদায়ী ওষুধ কিংবা ইনজেকশন সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। এই সমস্যার সমাধানে এবার এক ধাপ এগোল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ তৈরি করে ফেলেছে ব্যাটারিচালিত বিশেষ পোর্টেবল ফ্রিজ, যাতে বেশ কয়েক ঘন্টা ঠান্ডা রাখা যাবে মাছ, মাংস, দুধ থেকে শুরু করে ওষুধ। বাজারে বিক্রির জন্য এই ব্যাটারিচালিত ফ্রিজ এখনও না আনা হলেও শীঘ্রই তা সাধারণ মানুষ নাগালের মধ্যে পাবেন বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর। গোটা প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে টেকনিকাল এডুকেশন কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রামের (টিইকিউআইপি) ফেজ থ্রি ফান্ড।

এই ব্যাটারিচালিত পোর্টেবল ফ্রিজ বাজারে এলে বরফ ছাড়াই ওষুধ থেকে মাছ-মাংস সব কিছু ঠান্ডা রেখে পৌঁছে দেওয়া যাবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে।
এতদিন খাদ্য, ওষুধ প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে প্রয়োজন হত বরফের। কিন্তু এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে তৈরি ব্যাটারিচালিত পোর্টেবল মিনি ফ্রিজে ব্যাটারি দিয়ে চার্জ করে উৎপন্ন করা হবে ঠান্ডা। যে কোনও গরম এলাকা অথবা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ অথবা রেফ্রিজারেশন নেই এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাও ততটা ভালো নয়, সেখানে মাছ-মাংস থেকে বিভিন্ন ওষুধ, ইনজেকশন, রক্তের নমুনা, এমনকী পালস পোলিওর টিকা পর্যন্ত এই পোর্টেবল ফ্রিজে করে পৌঁছে দেওয়া যাবে দূরের এলাকায়। মোটর সাইকেলে বহন করা যাবে এই ফ্রিজ। এই পোর্টেবল ফ্রিজ তৈরির নেপথ্যে রয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক প্রনিবেশ মন্ডল।

অধ্যাপক প্রনিবেশ মন্ডল

thebengalstory.com কে তিনি জানিয়েছেন, ‘রেফ্রিজারেটর একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। গ্রামাঞ্চলে এখনও এর অভাব রয়েছে । এই বিশেষ ফ্রিজের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওষুধ, রক্তের নমুনা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য। ফ্রিজটিতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ডিজিটাল সিস্টেম রয়েছে, পাশাপাশি ঠান্ডা অবস্থা বজায় রাখার জন্য থাকবে কুলিং ইউনিট। এছাড়া রয়েছে স্টোরেজ বক্স, যেখানে ওষুধ সামগ্রী ভর্তি করে বহন করা যাবে। সাধারণত ফ্রিজটিতে রাখা কোনও জিনিস প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা, এমনকী তা বাড়িয়ে কখনও কখনও পাঁচ-ছয় ঘন্টাও ঠান্ডা অবস্থায় রেখে দেওয়া যাবে। তবে এই নির্দিষ্ট সময় যদি পেরিয়ে যায় সেক্ষেত্রে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রয়েছে বলে প্রনিবেশবাবু জানিয়েছেন। সম্প্রতি চেন্নাইয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং সোর্স শো’তে অধ্যাপক প্রনিবেশ মন্ডলের তৈরি এই ব্যাটারিচালিত পোর্টেবল ফ্রিজ যথেষ্টই প্রশংসা কুড়িয়েছে। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক সায়ন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এই পোর্টেবল মিনি ফ্রিজ রাজ্য বতো বটেই, দেশেও গ্রাম-গঞ্জে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.