Pulse Oximeter: অক্সিমিটার কী এবং কতটা জরুরি?

সারা বিশ্বে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা। এদিকে হাসপাতালে অপ্রতুল শয্যার জন্য বহু জায়গাতেই বলা হচ্ছে, উপসর্গহীন ও মৃদু সংক্রমিত করোনা রোগীরা চাইলে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করাতে পারেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) জানাচ্ছে, দেশের ৮০ শতাংশ করোনা রোগী উপসর্গহীন। এই প্রেক্ষিতে বিশ্বের তাবড় চিকিৎসক মহল pulse oximeter ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।

 

কী এই Pulse Oximeter? করোনা মোকাবিলায় এর কাজ কী? কীভাবেই বা ব্যবহার হয়?

রক্তে অক্সিজেন আর পালস রেট পরিমাপের জন্য পালস অক্সিমিটার ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। The New York Times এ গত ২০ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন লিখেছেন আমেরিকার বিখ্যাত চিকিৎসক-গবেষক রিচার্ড লেভিটন। ‘The Infection That’s Silently Killing Coronovirus Patients’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে প্রবীণ চিকিৎসক ১০ দিন নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক হিসেবে যে কয়েকজন রোগীর চিকিৎসা করেছেন, পর্যবেক্ষণ করেছেন তাতে কোভিড-১৯-নিউমোনিয়ার মারণ প্রভাব উঠে এসেছে তাঁর নজরে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত যদি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তাতে প্রাণের আশঙ্কা বেশি বলে মত চিকিৎসকের। এই প্রেক্ষিতে তিনি তুলে ধরেছেন ‘সাইলেন্ট হাইপক্সিয়া’ সমস্যা এবং  pulse oximeter ব্যবহারের কথা।

 

সাইলেন্ট হাইপক্সিয়া এবং পালস অক্সিমিটার (Silent Hypoxia and Pulse Oximeter)

oximeter

 

রক্তে যদি অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় হাইপক্সিয়া। আর pulse oximeter হল একটি ছোট্ট ডিভাইস যা আঙুলের মধ্যে লাগিয়ে শরীরে oxygen saturation monitor ও পালস রেট মাপা যায়। সাধারণত কোনও সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ৯৭ শতাংশ অক্সিজেন স্যাচুরেশন হয়। যদি ৯২ শতাংশের নীচে অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমে যায় তবে তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা যায়। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হয় এবং নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয় শরীরে।

অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮০ শতাংশের নীচে চলে গেলে হৃৎপিন্ড, যকৃৎ, কিডনি ইত্যাদি বিকল হতে পারে। আবার কিছু কারণে ‘সাইলেন্ট হাইপক্সিয়া’র সমস্যা হয়। অর্থাৎ, কোনও ব্যক্তির শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম হচ্ছে, কিন্তু শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা না দেখা যাওয়ায় তিনি তা উপলব্ধি করতে পারেন না। কোভিড-১৯ আক্রান্ত কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ঠিক একই ঘটনা ঘটছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। আমেরিকান চিকিৎসক লেভিটন তাঁর লেখায় জানাচ্ছেন, কিছু করোনা রোগীর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলেও তা আগেভাগে বুঝে উঠতে পারছেন না। কারণ, তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত কোনও সমস্যাই হচ্ছে না। এটাই সাইলেন্ট হাইপক্সিয়া। সেক্ষেত্রে বড় ভরসার যন্ত্র হল এই pulse oximeter.

চিকিৎসকদের পরামর্শ, করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা কিংবা কম সংক্রমিতরা আঙুলে পালস অক্সিমিটার লাগিয়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের দিকে নিজেরাই নিয়মিত নজর রাখতে পারেন। এই ছোট্ট যন্ত্রই তাঁদের করোনার মারণ প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারে।

মার্কিন চিকিৎসক রিচার্ড লেভিটন দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে লিখেছেন, কম অক্সিজেন স্যাচুরেশন কোভিড- ১৯ নিউমোনিয়ার লক্ষণ হতে পারে। রোগীর ফুসফুস ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেটা একেবারে রোগীর অজান্তেই। প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন ওই রোগীকে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দিতে হয়। করোনা রোগীর ক্ষেত্রে কী কারণে আগেভাগে শ্বাসকষ্টের সমস্যা প্রকাশ হয় না, তা নিয়ে চিকিৎসকদের ভিন্ন মত। তবে চিকিৎসক লেভিটন জানাচ্ছেন আগেভাগে যদি এই ‘সাইলেন্ট কিলার’কে ধরে ফেলা যায় তবে তা আর প্রাণঘাতী হবে না।

 

পালস অক্সিমিটার কি কোভিড১৯ শনাক্ত করতে পারে? (How Pulse Oximeter Identify COVID-19?)

Oximeter করোনা শনাক্ত করবেই, একথা জোর দিয়ে বলা যাবে না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে অক্সিজেনের বিপজ্জনক নিম্ন মাত্রা দেখলেও এমন নয় যে তিনি করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। সিওপিডি, অ্যাজমা ও কোভিড-১৯ এর সঙ্গে সম্পর্কহীন ফুসফুসীয় সংক্রমণের মতো দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগেও হাইপোক্সিয়া হতে পারে।

রিডিংয়ে অক্সিজেনের নিম্ন মাত্রা নিজেই করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করতে যথেষ্ট নয়, কিন্তু সময়ের আবর্তনে মাত্রা আরো কমতে থাকলে চিকিৎসক জানতে চাইবেন কোভিড-১৯ টেস্ট করেছেন কিনা। তাই উপসর্গ দেখা দিলে করোনা টেস্ট করে নিন। আপনার কোভিড-১৯ শনাক্ত হলে চিকিৎসক পরিস্থিতি খারাপ নাকি ভালো হচ্ছে নির্ধারণ করতে oxygen level monitor করতে পারেন।

 

কীভাবে ব্যবহার করবেন পালস অক্সিমিটার? (How to Use Pulse Oximeter?)

oxygen saturation monitor

 

আঙুলে pulse oximeter বসিয়ে দিলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দুটি আলাদা ডিজিট ভেসে ওঠে ডিভাইসের স্ক্রিনে। একটি নির্দেশ করে অক্সিজেন স্যাচুরেশন আর অন্যটি পালস রেট।

এই পরীক্ষার জন্য মধ্যমা এবং তর্জনী বা বুড়ো আঙুলে অক্সিমিটার ব্যবহার করতে হয়। এমনিতে দিনে দু’বার পরীক্ষা করালেই যথেষ্ট, তবে সমস্যা জটিল হলে প্রতি চার থেকে ছয় ঘণ্টা অন্তর পরীক্ষা করতে পারেন। তবে আঙুল ঠান্ডা হলে বা জ্বর হলে অনেক সময়েই ভুল রিডিং আসতে পারে, সে ক্ষেত্রে একটু বিরতি দিয়ে পুনরায় মাপতে হবে।

এই oxygen saturation monitor -এর আগে থেকে রোগী সাবধান হতে পারেন। চিকিৎসক লেভিটন জানিয়েছেন, যাঁদের কোভিড-১৯ পজিটিভ, তাঁর দু’সপ্তাহ পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করে কোভিড নিউমোনিয়ার সংক্রমণ হচ্ছে কী না দেখুন। অক্সিজেন স্যাচুরেশনের বেগতিক দেখলে হাসপাতালে যান। যদি কেউ উপসর্গহীন-ও হন কিন্তু জ্বর, কফের সমস্যা, গলা ব্যথা ইত্যাদিতে ভুগছেন কিংবা, যাঁদের সোয়াব টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে তাঁদেরও পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন ওই চিকিৎসক। কারণ, কেবল ৭০ শতাংশ সোয়াব টেস্টের রেজাল্ট ঠিকঠাক আসে, বাকি ৩০ শতাংশ নিয়ে ধন্দ থেকেই যায় বলে দাবি তাঁর।

 

পালস অক্সিমিটার ব্যবহারের সুবিধা (Advantages of Using Pulse Oximeter)

১) থার্মোমিটারের মতো পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করাও ভীষণ সহজ। পালস অক্সিমিটার কিনতে গেলে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনেরও প্রয়োজন হয় না।

২) যন্ত্রে অক্সিজেন স্যাচুরেশন যদি ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশও হয় তাহলে স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা স্বাভাবিক। তবে ক্রনিক লাং ডিজিস থাকলে ৯২ শতাংশও হতে পারে। আঙুলে বসানো পালস অক্সিমিটার যদি একাধিকবার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯২ শতাংশ দেখায় সেক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আবার কিছু চিকিৎসক জানাচ্ছেন, অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ এর নীচে গেলেও চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু করোনা আবহে ৯৪ থেকে কমলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

 

দাম কত এবং কোথায় পাবেন অক্সিমিটার?

pulse oximeter Advantages

 

সার্জিক্যাল স্টোর ছাড়াও অনেক মেডিক্যাল স্টোরেই এখন অক্সিমিটার মিলছে। তাছাড়া অনলাইনেও কিনতে পাওয়া যায়। দাম পড়বে ১ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। তবে ঘরে-ঘরে অক্সিমিটার মজুত না করে, আবাসন বা অ্যাপার্টমেন্টে কয়েকটি অক্সিমিটার রেখে তা স্যানিটাইজ করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে অক্সিমিটারের আকাল তৈরি হবে না।

 

 পালস অক্সিমিটারের অসুবিধা (Disadvantages of Pulse Oximeter)

যে কোনও যন্ত্রের মতো পালস অক্সিমিটারও ১০০ শতাংশ নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য রেজাল্ট দিতে পারে না। যেমন এই বিষয়ে The Guardian পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যালান ডাগান নামে এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, নেল পলিশ পরলে কিংবা আঙুল ঠান্ডা থাকলেও পালস অক্সিমিটারের রিডিং-এর তারতম্য হতে পারে। তাই এটাই কোভিড-১৯ রোগীদের সাবধান রাখতে শেষ কথা নয়।

Comments are closed.