‘রোগী যখন শয্যায়, তাঁকে রিলিফ দিতে হবে’, ভারতের অর্থনীতিকে রোগীর সঙ্গে তুলনা করে কেন্দ্রকে খরচ বৃদ্ধির পরামর্শ রঘুরাম রাজনের

রোগী যখন শয্যায় এবং রোগের সঙ্গে লড়াই চলছে, তখন তাঁকে রিলিফ দেওয়াই একমাত্র কাজ। ভারতের অর্থনীতি এখন তেমনই এক রোগী। তার চাই রিলিফ। এমনই বললেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। কেন্দ্র ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজকে টনিক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, এই সময় টনিকে কাজ হবে না।

এই মুহূর্তে রিলিফ প্যাকেজ ঘোষণা না করলে কী হবে তাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নিজের ব্লগে। সোমবার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক লিঙ্কডিনে তা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলছেন, রিলিফ না দিলে বাড়িতে বাড়িতে খাওয়া কমে যাবে, বাচ্চাদের আর স্কুলে পাঠানোর সামর্থ থাকবে না, ভিক্ষেবৃত্তির দিকে চলে যাবে অসংখ্য শিশু। ঘরে সঞ্চিত সোনা বেহাত হবে। অন্যদিকে ইএমআই ক্রমেই বেড়ে চলবে নিয়ম করে। আর ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্পোদ্যোগ যেমন ধরুন রেস্টোরেন্টের ক্ষেত্রে রিলিফের অভাবে প্রথমেই কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে, বাজারে ঋণের পরিমাণ বাড়বে লাফিয়ে লাফিয়ে এবং একটা সময় চিরকালের জন্য দোকানে ঝাপ পড়বে। অর্থনীতির স্বাস্থ্য সত্যিই রোগশয্যায় থাকা রোগীর সঙ্গে তুলনীয়।

এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর উপায় কী?

সাম্প্রতিক ব্লগে রঘুরাম রাজন এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর উপায় হিসেবে বলেছেন সরকারি খরচ বৃদ্ধি করার কথা। তিনি বলেছেন, মহামারি এখনও মধ্যগগনে। এই সময় কেউ পকেটের অর্থ খরচ করবেন ভাবাটা ভুল। খরচ বাড়াতে হবে সরকারকেই। যাতে বাজারে টাকার যোগান আসে। সর্বোপরি আত্মবিশ্বাস ফেরে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে অসন্তোষ গোপন করেননি মার্কিন মুলুকের বুথ স্কুলের ফিনান্সের অধ্যাপক। তিনি বলেছেন, নিজেদের দুর্দশার কথা বিবেচনা করে আত্মসন্তুষ্টির পথ থেকে সরে এসে অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে হবে। কী সেই পদক্ষেপ?

একদিকে ফ্রি রেশন পাশাপাশি নগদ হস্তান্তর। এছাড়া উপায় নেই। রঘুরাম রাজনের আশঙ্কা, ভারতের জিডিপি ২৩.৯ শতাংশ সঙ্কুচিত বলে দেখা গেলেও, এর প্রভাব বহু সুদূরপ্রসারী। তিনি বলছেন, এই সঙ্কোচনের হিসেবে অসংগঠিত ক্ষেত্র নেই। অথচ সেখানেই প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তাই অঙ্কের হিসেবে এই অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপির সঙ্কোচন ২৩.৯ শতাংশ হলেও আদতে তা আরও অনেক বেশি। পরিস্থিতি ঠিক কেমন তা বোঝাতে রঘুরাম রাজন লিখেছেন, তুলনা করা হলে ভারতের অবস্থা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কোভিড প্রভাবিত দুই দেশ, যাদের অর্থনীতিও সঙ্কুচিত হয়েছে, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালির চেয়েও খারাপ।

এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক অনুদানের ঘোষণা না করলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক জায়গায় চলে যেতে পারে। রঘুরাম রাজনের কথায়, পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, সাধারণ মানুষ নিজেদের খোলসের মধ্যে ঢুকিয়েও বাঁচাতে পারছেন না। অথচ অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যে সরকারের এখন আগ্রাসী হওয়া প্রয়োজন, তাঁরা নিজেদের খোলসের মধ্যে পুরে বসে আছেন।

Comments are closed.