জুন-জুলাইয়ে নিরাশ করলেও অগাস্টের বৃষ্টিতে রেকর্ড কৃষি ফলনের আশা, হাল ফিরবে অর্থনীতির?

কাল যেখানে খরার প্রকোপ ছিল, আজ সেখানেই বন্যার থই থই জল। ভারতের বর্ষা চিত্র মোটের উপর এরকমই। জুন এবং জুলাইয়ে যেখানে গোটা দেশেই বর্ষার ঘাটতি দেখে প্রমাদ গুণছিলেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা, অগাস্টের মাঝামাঝি আমূল বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। তাই এখন তাঁরা বলছেন, অগাস্টের বৃষ্টি আশার আলো দেখাচ্ছে কৃষি প্রধান ভারতে। প্রবল বৃষ্টিতে একদিকে যেমন খেতের ফসল জল পাচ্ছে ভরপুর, ঠিক তেমনই রিজার্ভারে জমছে আরও বেশি জল। আর এই দুয়ের যোগফলে, রেকর্ড কৃষি উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছে গ্রামীণ ভারত।

হাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অগাস্টে এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, জলাধারগুলোতে ২৫ শতাংশ বেশি জল জমা হচ্ছে, যা এক দশকের গড়ের চেয়েও বেশি।

অথচ পরিস্থিতি মোটেই এরকম ছিল না। জুন মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছিল, স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের এক তৃতীয়াংশ। বৃষ্টিপাতের ঘাটতি প্রবল আকার নেওয়ায় খরা পরিস্থিতি ঘোষণা করা হবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। জলাধারগুলো জলের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছিল, জল ছিল না চাষের মাঠেও। পরিস্থিতি এমনই হয়, যে বিদর্ভ, মারাঠাওয়াড়ার একাধিক জায়গায় পানীয় জল অবধি সরবরাহ করতে হয় প্রশাসনকে। কিন্তু একমাস পেরোতে না পেরোতেই বদলে গিয়েছে দেশের বর্ষা-চিত্র। যা খরিফের পাশাপাশি রবি শস্য চাষেও বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

অগাস্টে পর্যাপ্ত বৃষ্টির পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। এর সরাসরি সুবিধা গিয়ে পৌঁছবে খরিফ বা গ্রীষ্মকালীন চাষাবাদে। এর ফলে আসন্ন উৎসবের মরসুমে চাহিদার ঊর্ধ্বগতি অক্ষুণ্ণ থাকবে। যার প্রভাবে আপাত বিপন্ন গাড়ি শিল্পের মুখেও ফুটতে পারে হাসি, এমনটাই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। চাহিদার অভাবের যে সমস্যায় ভারতের শিল্প মহল ভুগছে, অগাস্টের বৃষ্টি তাতেও প্রলেপ দেবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। কারণ ভালো কৃষি উৎপাদন ভারতের মতো কৃষি প্রধান দেশের অর্থনীতির পক্ষেও দুর্দান্ত সঙ্কেত।

ভালো বর্ষা রেকর্ড কৃষি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় পাসপোর্ট, এমনই বলছেন দেশের কৃষি সচিব এস কে মালহোত্রা। গতবারও আমরা রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের সাক্ষী হয়েছি, এবারও তার অন্যথা হবে না। জানাচ্ছেন কৃষি সচিব।

শুক্রবার প্রকাশ পাওয়া কৃষি মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, তৈলবীজের চাষ গতবারের প্রায় সমান এবং তুলো চাষ হয়েছে গতবারের চেয়ে ৫.৬ শতাংশ বেশি। ধান বোনা হয়েছে গতবারের চেয়ে ১১ শতাংশ কম। ফসল বোনার ক্ষেত্রে সবমিলিয়ে গতবারের চেয়ে মাত্র ৪ শতাংশ পিছিয়ে ২০১৯ সাল। অথচ জুন মাসে এই ফারাকটা ছিল ১২.৫ শতাংশ। অগাস্ট পর্যন্ত দেশে ধান বোনার কাজ চলে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডে অগাস্টের বৃষ্টিতে ধান বোনার কাজ এগিয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে এই অংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতির কোনও পূর্বাভাস নেই। ফলে ধানের ফলন এবছরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে গুজরাত, মহারাষ্ট্র এবং মধ্য প্রদেশে ব্যাপক বৃষ্টি তৈলবীজ চাষে অত্যন্ত সহায়ক হচ্ছে। ফলে তৈলবীজের উৎপাদনেও এবার জোয়ার আসতে চলেছে বলে মনে করছেন কৃষকরা। একই কথা কৃষি বিশেষজ্ঞদের গলাতেও। এই পরিস্থিতিতে জুন ও জুলাইয়ে বর্ষার ঘাটতি ষোলোআনা পূরণ করে দেওয়ার পথে অগাস্টের বৃষ্টিপাত। যা কার্যত আশীর্বাদ হয়ে নেমে এসেছে ভারতের খেতে-মাঠে। নড়বড়ে অর্থনীতিকে ফের পোক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে যুগ যুগান্ত ধরে যার কোনও বিকল্প নেই।

Comments are closed.