বাংলা-গুজরাতের সংস্কৃতি ও শিল্পের মধ্যে তুলনা ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহর! কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বিজেপি-কংগ্রেসের?

ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহের একটি ট্যুইট। আর তা নিয়েই তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। কি কংগ্রেস, কি বিজেপি, সবাই কার্যত কোমর বেঁধে রামচন্দ্র গুহর ট্যুইটের সমালোচনায় সরব। কিন্তু কী ট্যুইট করেছিলেন রামচন্দ্র গুহ?
বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা নাগাদ নিজের ভেরিফায়েড হ্যান্ডেল থেকে ট্যুইট করেন ইতিহাসবিদ। সেই ট্যুইটে ব্রিটিশ বামপন্থী নেতা ফিলিপ স্প্র্যাটকে উদ্ধৃত করে রামচন্দ্র গুহ লেখেন, গুজরাত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকলেও সংস্কৃতিগতভাবে পিছিয়ে, উল্টোদিকে বাংলা সংস্কৃতির দিক থেকে এগিয়ে কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে। ১৯৩৯ সালে স্প্র্যাট এই মন্তব্য করেছিলেন বলে লেখেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ।

এই ট্যুইট করার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। কেউ দাবি করেন ইতিহাসকে বিকৃত করছেন রামচন্দ্র গুহ, আবার কেউ বিভাজনের চক্রান্তের আওয়াজ তোলেন। বর্তমান বিজেপি নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দক্ষিণপন্থী নিউজ পোর্টাল অপ ইন্ডিয়া সরাসরি অভিযোগ করে, রামচন্দ্র গুহ বাংলা ও গুজরাতের পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে ভুল ইতিহাসের আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ তথা বলিউড অভিনেতা পরেশ রাওয়ালও রামচন্দ্র গুহের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে ট্যুইট করেন।

সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি ট্যুইটে লেখেন, আগে ব্রিটিশ সরকার ভারতকে ভাগ করার চেষ্টায় মগ্ন থাকত, এখন কিছু অভিজাত মানুষ সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন।

রামচন্দ্র গুহের সমালোচনা করে ট্যুইট করেন কংগ্রেস নেতা তথা গুজরাতেরই বাসিন্দা আহমেদ প্যাটেলও।

হ্যাশট্যাগ গুহ ডিভাইডস ইন্ডিয়া দিয়ে রামচন্দ্র গুহকে আক্রমণ করে অন্তত ৪৫ টি ট্যুইট করে ইংরেজি নিউজ চ্যানেল টাইমস নাউ। অনেকেই ট্যুইট করতে থাকেন, গুজরাত তৈরি হয়েছে ১৯৬০ সালে, তাহলে ব্রিটিশ বামপন্থী কোথা থেকে ১৯৩৯ সালে গুজরাত পেলেন? একাংশ দাবি করেন, ফিলিপ স্প্র্যাট এমন কোনও কথাই বলেননি।
কিন্তু সত্যিই কি ইতিহাস বিকৃত করেছেন রামচন্দ্র গুহ? সত্য ঘটনা কী?
এই দুই ধরনের দাবিরই ফ্যাক্ট চেক করে AltNews। তাতে দেখা যায়, ১৯৩৯ সালে ব্রিটিশ বামপন্থী নেতা ফিলিপ স্প্র্যাট ‘গান্ধীইজম: অ্যান অ্যানালিসিস’ নামে বইয়ের দ্বিতীয় পাতায় গুজরাত সম্পর্কে নিজের মত ব্যক্ত করেছেন। তারপর আবার ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় বাংলা ও গুজরাতের তুলনা করতে গিয়ে একই কথা লিখেছেন। বইটি যে সময় বেরিয়েছিল, বর্তমান গুজরাত তখন ছিল বম্বে প্রেসিডেন্সির অংশ। অর্থাৎ, ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ যে ট্যুইটটি করেছিলেন তা সত্য।

দ্বিতীয় যে উত্তরটি AltNews খুঁজে বের করেছে তা হল, গুজরাত ১৯৬০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যের মর্যাদা পেলেও, তার বহু আগে থেকেই ওই অঞ্চলকে গুজরাত নামে ডাকার চল ছিল। এই প্রসঙ্গে AltNews দেখিয়েছে মহাত্মা গান্ধীর নিজের লেখা চিঠি। যেখানে অসংখ্যবার গুজরাত নামটি ব্যবহার করেছেন তিনি। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের গুজরাত কমিটি তৈরি হয়েছিল ১৯২০ সালে এবং সেই কমিটির প্রথম সভাপতি হয়েছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।
অর্থাৎ, ১৯৩৯ সালে কেবলমাত্র ফিলিপ স্প্র্যাটই নন, গুজরাতের রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশের বহু আগে থেকেই ওই অঞ্চলকে গুজরাত হিসেবেই অভিহিত করা হত।
যাঁর ট্যুইট নিয়ে চারদিকে এত তোলপাড়, সেই রামচন্দ্র গুহ অবশ্য এর একটি ভালো দিক দেখতে পাচ্ছেন। ফের একটি ট্যুইট করে তিনি জানিয়েছেন, লেখক হিসেবে ফিলিপ স্প্র্যাটকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিগত ৩০ বছর ধরে চেষ্টা করেছি। যাতে মানুষ আরও ভালোভাবে তাঁকে জানতে পারেন। কিন্তু ট্রোল আর্মি সেই কাজ একদিনের মধ্যেই সফলভাবে করে দেখাল!

Comments are closed.