ব্যতিক্রমী বাবা-মা দুই মেয়েকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দেশ ভ্রমণে! ঘুরতে ঘুরতেই স্বাভাবিক শিক্ষার রোড-স্কুলিং হায়দরাবাদের দম্পতির

৯ বছরের অনন্যা আর অমূল্যা চেরাপুঞ্জিতে শিখেছে জল চক্র। অরুণাচলের এক জায়গায় দুই বোন হাল চাষ করেছে। হাতেকলমে শিখেছে চিরাচরিত শক্তির উৎসকে বাঁচিয়ে কীভাবে কৃষিকার্য হয়। উত্তর-পূর্বেরই এক জায়গায় পথ হারায় তাঁদের গাড়ি। অজানা-অচেনা পরিবেশে, কীভাবে অপরিচিত গ্রামবাসীদের নিজেদের সমস্যার কথা বুঝিয়ে বলতে হয়, তারপর তাঁদের সাহায্য নিয়ে সমস্যা সমাধান, সবই অনন্যা-অমূল্যাকে নিজে নিজেই করতে হয়েছে। ওরা স্কুলে পড়ে না। মা-বাবা দুই সন্তানকে নিয়ে দেশ বিদেশ চষে বেড়ান। পথে পথেই শিক্ষা হয় অনন্যা-অমূল্যার। গঙ্গাধর কৃষ্ণাণ আর রম্যা লক্ষীনাথ দেশের প্রথম রোডস্কুলিং পেরেন্ট।

হায়দরাবাদের সাইবার দম্পতি গঙ্গাধর আর রম্যা। সফটওয়্যার সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত। কিন্তু অঢেল অর্থ যেন কোনও প্রয়োজনেই লাগছে না। দম্পতি স্থির করেন, অনেক হল চাকরি। নিজেদের মতো করে বাঁচতে হবে। আর সন্তানদের দিতে হবে বেড়ে ওঠার সর্বোৎকৃষ্ট সুযোগ। কী করে তা সম্ভব?

২০১৮ সালে কর্পোরেটের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দেন গঙ্গাধর। শুরু করেন একটি ট্রাভেল স্টার্টআপ। মেয়েদেরও স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনা হল। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ার সেই শুরু। দুই মেয়েকে নিয়ে রম্যা আর গঙ্গাধর ছোট্ট ন্যানোতে চড়ে চললেন। ৯০ দিনের শিক্ষামূলক ভ্রমণে মা-বাবা দুই মেয়েকে নিয়ে পেরিয়েছেন ১৩ হাজার কিলোমিটার পথ। পথে পথেই পেরিয়ে গিয়েছে ১৫ টি রাজ্য, ৩ টি আন্তর্জাতিক সীমান্ত। হায়দরাবাদ থেকে ওড়িশা, বাংলা হয়ে অসম দিয়ে উত্তর-পূর্ব। সেখান থেকে ভুটান হয়ে ফেরত। সেই ট্রিপেই অনন্যা-অমূল্যা শিখে ফেলেছে তাবু খাটানো থেকে শুরু করে কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয় তার সারসত্ত্ব। পরখ করে দেখেছে ভারতের চিরন্তন বৈচিত্র।

করোনার জেরে দুই মেয়ের পরবর্তী ট্রিপ একটু দীর্ঘায়িত হয়েছে ঠিকই কিন্তু ক’দিন আগেই মা-বাবার সঙ্গে তাঁরা বেড়িয়ে এসেছে মাইসোর। ফেরার পথে হন্নেমারাদুতে তাঁদের সঙ্গে দেখা নারী শক্তি পুরস্কার জেতা নোমিতো কামদারের। নোমিতো কামদার আউটডোর লার্নিং ও আদিবাসী অধিকার সুরক্ষার দাবিতে লড়াই চালাচ্ছেন দীর্ঘ কয়েক দশক। হাসিমুখে দুই বোনের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি।

রম্যা আর গঙ্গাধর বলছেন, আমরা বিশ্বাস করি শিক্ষা হবে স্বাভাবিক, পরিকাঠামোগত নয়। স্বাভাবিক শিক্ষার সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হল ভ্রমণ। দুই মেয়েকে তাই স্কুলের বইয়ের মধ্যে আটকে ফেলতে চাইনি কোনওদিন। ওরা ঘুরুক, ঘুরতে ঘুরতেই শিখুক। সেই তো শিক্ষা।

Comments are closed.