আরএসএস-কে নিয়ে বলিউডে তৈরি হচ্ছে ১৮০ কোটি টাকা বাজেটের হিন্দি সিনেমা, মুক্তি লোকসভা ভোটের আগেই।

আরএসএসকে নিয়ে এবার ১৮০ কোটি টাকার বিগ বাজেট ছবি বলিউডে। বলিউডের সাম্প্রতিক ব্লক-বাস্টার ছবি বাহুবলীর স্ক্রিপ্টরাইটার কে ভি প্রসাদ লিখেছেন এই ছবির চিত্রনাট্য়। আরএসএসের উদ্ভব, তাদের ইতিহাস, দেশ ও সমাজ গঠনে অবদান, এই সব কিছু নিয়েই তৈরি হয়েছে চিত্রনাট্য়। আর ছবির চিত্রনাট্য়ে ইতিমধ্য়েই সম্মতি দিয়েছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। টানা একমাস ধরে ২৭ জন কাজ করেছেন চিত্রনাট্য়টি তৈরি করতে। ছবির পরিচালক ঠিক না হলেও, কর্ণাটকের বিজেপি সমর্থক ও সিনেমা জগতের নামজাদা নাইডু ভ্রাতৃদ্বয় এই ছবির প্রযোজনা করবেন। সম্ভাব্য় দুটি নাম বাছা হয়েছে ছবিটির। একটি শুধুই ‘আরএসএস’, অন্যটি ‘আরএসএস ভাগ্য়ধ্বজ’।
বলিউডের একাধিক নামী অভিনেতাকে একসঙ্গে দেখা যেতে পারে এই ছবিতে। তাঁদের মধ্য়ে সবার আগে রয়েছে অক্ষয় কুমারের নাম। মূল ছবি হিন্দিতে তৈরি হলেও, পরে তা ডাবিং করা হবে মারাঠা, তেলেগু, তামিল,কন্নড়সহ একাধিক আঞ্চলিক ভাষাতেও। দেশের বাইরে এই ছবির প্রচারের জন্য় ইংরেজি ভাষাতেও এর ডাবিং করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
আরএসএসের আদর্শ ও ভাবনাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, তা তুলে ধরতে হবে বড় পর্দার মাধ্য়মে। এই প্রস্তাব নিয়ে কয়েক মাস আগে চিত্রনাট্যকার কে ভি প্রসাদ ও প্রযোজক ভেলু নাইডু আরএসএস দফতরে পৌঁছন। সংগঠনকে জনপ্রিয় করে তুলতে তাঁদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন শীর্ষ নেতারা। ২০১৪ সালে বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গঠনের পর বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আসে। স্বচ্ছ ভারত অভিযান যার মধ্য়ে উল্লেখযোগ্য়। কেন্দ্রের নানা প্রকল্পের ভাবনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একাধিক হিন্দি ছবির চিত্রনাট্য়। জনপ্রিয় হয়েছে ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’র মত ছবি। তবে সরাসরি রাজনৈতিক কোনও সংগঠনের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে বড় পর্দাকে এভাবে ব্য়বহার করার ঘটনা আগে দেখেনি বলিউড।
ছবিটির সম্ভাব্য় মুক্তি ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ঠিক আগে। যদিও লোকসভা ভোটের সঙ্গে এই ছবির কোনও সম্পর্ক নেই বলেই জানিয়েছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। সংগঠন সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের নানারকম সংশয়, প্রশ্ন দূর করাই এর মূল উদ্দেশ্য়, জানান তিনি। এই ছবি ভি সাভারকার, কেশব বালিরাম এবং এম এস গোলওয়ালকারের মত আরএসএসের নেতাদের কঠিন লড়াইকে তুলে ধরবে মানুষের সামনে। জন্মলগ্ন থেকে কীভাবে কাজ করছে আরএসএস সে কথাও উঠে আসবে ছবিটিতে। গোটা দেশে এই সংগঠনের ৫০ হাজার শাখার কর্মীরা কীভাবে নিজেদের আদর্শ মেনে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে চলেছেন, থাকবে সে কথাও।
নিছক নিজেদের কাজকে তুলে ধরতে এই ছবি বলে আরএসএস দাবি করলেও, বিরোধী দল এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এর পিছনে অন্য় কারণ দেখছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, যে প্রতিশ্রতি দিয়ে ২০১৪ সালের নরেন্দ্র মোদি সরকার গড়েছিলেন, তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। গোটা দেশেই এই সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। আর যত তা হচ্ছে, ততই ধর্মীয় মেরুকরণের রাস্তায় হাঁটছে আরএসএস। সেই কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করতে একদিকে চলছে বিভাজনের রাজনীতি, অন্যদিকে বিজেপির চালিকা শক্তি কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে সরকারের। ২০১৯ লোকসভা ভোটে বিজেপিকে অক্সিজেন যোগানোই এই ছবি তৈরির পিছনে একমাত্র কারণ বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.