সিপিএমের অস্বস্তি বাড়িয়ে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে নন-কমিউনিস্ট বলে উল্লেখ আরএসএসের মুখপত্রে

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর বিতর্ক এবং অস্বস্তি যেন পিছু ছাড়ছেই না সিপিএমের।
বিতর্কটা শুরু হয়েছিল গত ১৩ ই অগাস্ট সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর দিন। সিপিএম পলিটব্যুরোর তরফে প্রকাশিত শোক বার্তায় সোমনাথবাবুকে শুধুমাত্র লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও দশ বারের সাংসদ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, ২০০৮ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো একজন সাংসদ এবং দলমত নির্বিশেষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতাকে বহিষ্কার করা হলেও, কেন তাঁকে মৃত্যুর পরও কমিউনিস্ট বা কমরেড তকমা দেওয়া হল না? এই নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল সিপিএমের অন্দরেও। বিতর্কের জেরে অস্বস্তিতে পড়ে রাজ্য সিপিএমের তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে সেদিন বিকেলেই সোমনাথবাবুকে ‘কমরেড’ বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। সোমনাথবাবুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছেলে প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়ের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তীদের। এমনকী প্রথমে বিমান বসুদের নিজেদের বাড়িতে ঢুকতে দিতেও চাননি সোমনাথবাবুর পরিবার। দলের তরফে তাঁর মরদেহে দলীয় লাল পতাকা রাখা ও দলীয় কার্যালয়ে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব রাজ্য সিপিএমের তরফে দেওয়া হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পরবর্তী প্রজন্ম।
এবার সিপিএমের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে আরএসএসের ইংরাজি মুখপত্র অরগানাইজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও দাবি করা হল, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় নাকি আদতে কমিউনিস্ট ছিলেন না। মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে প্রথমেই বলা হয়েছে, ‘ধর্মীয় রীতি নীতি পালন করা হয় এমন এক পরিবারে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, এবং তাঁর মৃত্যুও হয়েছে একজন নন-কমিউনিস্ট হিসেবে। এই দুই চরম অবস্থার মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি ছিলেন একজন রাষ্ট্রনেতা’। বলা হয়েছে, ‘পার্টি লাইনের উর্ধ্বে উঠে তিনি একজন দেশনায়ক ছিলেন’। সোমনাথবাবুকে এই নন-কমিউনিস্ট বলার যুক্তি হিসাবে প্রতিবেদনটিতে হাতিয়ার করা হয়েছে সিপিএম পলিটব্যুরোর সেই বিবৃতিকে, যেখানে মৃত্যুর পর তাঁকে বামপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়নি। অরগানাইজারের ‘সোমনাথ দা নট অ্যা কমিউনিস্ট’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ও বেড়ে ওঠা একটি জাতীয়তাবাদী পরিবেশে। ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে গণেশ বসুদেব মাভালাঙ্কারের পর তিনিই হলেন দ্বিতীয় স্পিকার যিনি সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি সিপিএমে যোগ দেন এবং ২০০৮ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। শোকবার্তায় তাঁর দল এটা স্পষ্ট করেছে যে, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন একজন নন-কমিউনিস্ট, দেশপ্রেমী ভারতীয় হিসাবে।’
প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৮ সালে পরমাণু চুক্তি ইস্যুতে বিরোধীদের তরফে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটির সময় স্পিকার হিসেবে কীভাবে তিনি সেই পদটিকে দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দলীয় নির্দেশ না মানায় সিপিএম তাঁকে বহিস্কার করে। এছাড়াও শুরু থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শেষ পর্যন্ত, এমনকী তাঁর মৃত্যুর পর যা যা ঘটেছে তাও উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। সোমনাথবাবুর জন্ম ও বংশ পরিচয় সম্বন্ধে বলতে গিয়ে প্রতিবেদনে এও উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর বাবা নির্মল চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। যিনি পরে হিন্দু মহাসভার সভাপতি নির্বাচিত হন।

Comments are closed.