সৌরভকেই ৬ বছরের জন্য পূর্ণ মেয়াদ প্রেসিডেন্ট রাখতে প্রস্তাব আনছে বোর্ড, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনা

মহানাটকীয় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট পদে বসেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। কিন্তু লোধা কমিটির নিয়ম অনুযায়ী সিএবি সভাপতি হিসেবে ৫ বছর কাটিয়ে ফেলায়, বোর্ড সভাপতি পদে সৌরভের মেয়াদ মাত্র ১০ মাস। এবার কি সেই নিয়মে বদল এনে সৌরভকেই একটানা ৬ বছর পদে রাখা হবে? সূত্রের খবর, এবিষয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে বোর্ড।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে সিওএ-রাজ শেষ হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মসনদে বসেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। সচিব বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ। কিন্তু তাঁরা দুজনেই নিজ নিজ রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। লোধা কমিটির নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য কিংবা বোর্ড, একটানা ৬ বছর কোনও পদে থাকলেই বাধ্যতামূলকভাবে যেতে হবে ৩ বছরের কুলিং অফ পিরিয়ডে। সেই সময় কোনও ক্রিকেট সংস্থার সঙ্গেই যুক্ত থাকা যায় না। কিন্তু সমস্যা হয়েছে, এই নিয়মের গেড়োয় বিসিসিআই সভাপতি পদে সৌরভ গাঙ্গুলির মেয়াদ মাত্র ১০ মাস। তারপর দাদাকে চলে যেতে হবে বাধ্যতামূলক ৩ বছরের কুলিং অফে। বিসিসিআইয়ের অন্দরের খবর, সেই নিয়মেই এবার বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে চর্চা শুরু হয়েছে, কীভাবে আইসিসিতে শ্রীনিবাসনকে পাঠানো যায়, তা নিয়ে।

বিসিসিআইয়ের প্রভাবশালী মহলের যুক্তি, ক্রিকেট খেলা কিংবা ক্রিকেট প্রশাসন, সৌরভ গাঙ্গুলি নির্বিকল্প। এমন যোগ্য ব্যক্তিকে স্রেফ নিয়মের দোহাই দিয়ে ৩ বছরের বনবাসে পাঠালে আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতীয় ক্রিকেট। পাশাপাশি এই নিয়ম কার্যকর থাকলে কোনও যোগ্য লোককেও পাওয়া যাবে না। ফলে নতুন করে ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালন নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাই দরকার এই নিয়মের বদল। সব ক্ষেত্রে না হলেও অন্তত প্রেসিডেন্ট এবং সচিব পদ এই নিয়মের ব্যতিক্রম হোক, এটাই এখন চাইছেন বোর্ড কর্তারা বলে খবর। ১ লা ডিসেম্বর মুম্বইয়ের সদর দফতরে বসছে বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা। সেখানে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। প্রস্তাব পাস করাতে গেলে দরকার সদস্যদের অন্তত তিন চতুর্থাংশের সমর্থন। পরিস্থিতি যা তাতে সেই সমর্থন জোগাড়ে সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন বোর্ডের প্রভাবশালী অংশ। সাধারণ সভায় প্রস্তাব পাস হয়ে গেলে, ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে বোর্ড। শীর্ষ আদালতকে এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে নিয়মে বদল আনার জন্য আবেদন করা হবে। শীর্ষ আদালত ছাড়পত্র দিলেই বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে সৌরভ আরও লম্বা ইনিংস খেলবেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, সুপ্রিম কোর্ট কি আদৌ বোর্ডের এই আবেদন মানবে? সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত কমিটিই এই নিয়মের প্রবর্তন করে। তাই সুপ্রিম কোর্ট বোর্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিজের তৈরি নিয়ম বাতিল করবে, এমনটা মনে করা অতি-সরলীকরণ হবে বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। যদিও বোর্ডের প্রভাবশালী মহল আশাবাদী, বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আদালত নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতেই পারে। সেক্ষেত্রে সৌরভ, জয় শাহদের পদে থাকার মেয়াদ বাড়তে পারে।

সবমিলিয়ে ১ লা ডিসেম্বর বোর্ডের এজিএমের আগে সৌরভের ইনিংসের স্থায়ীত্ব নিয়েই চলছে জোর জল্পনা। কিন্তু বোর্ডের যুক্তি মানবে কি সুপ্রিম কোর্ট? সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে মহানাটকীয় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে রাতারাতি প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে ঢুকে, বাকিদের ছিটকে দিয়ে দাদা বাজিমাত করলেন, তাতে এমন আরও চমক তাঁর আস্তিনে লুকোনো আছে, এমনটাই মনে করছেন ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরা।

Comments are closed.