বিমান বসুর সঙ্গে কথা কাটাকাটি! ‘মুখে মুখে তর্ক করছ কেন?’ রবীন দেবকে ভর্ৎসনা সেলিমের, রাজ্য কমিটিতে বেনজির কাণ্ড

নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল সিপিএমের রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে। শুক্রবার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সিপিএমের রাজ্য কমিটির মিটিং হয়। মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। এই মিটিংয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেওয়া এক সিদ্ধান্তের বেনজির ভাবে বিরোধিতা করেন দলেন প্রবীণ নেতা রবীন দেব। তখন তাঁকে থামান বিমান বসু। এরপর বিমান বসুর সঙ্গে কার্যত কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন রবীন দেব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হস্তক্ষেপ করেন আর এক পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। রবীন দেবকে ভর্ৎসনা করে তিনি বলেন, ‘তুমি তর্ক করছ কেন, কিছু বলার থাকলে পরে বলবে।’ মিটিং চলাকালীন এই বেনজির কাণ্ডে আগাগোড়া চুপ ছিলেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
ঘটনার সূত্রপাত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক নেতাকে কেন্দ্র করে। হলদিয়ার এক সিপিএম নেতা শ্যামল মাইতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দলবিরোধী কার্যকলাপ সহ একাধিক অভিযোগ বহু দিন ধরেই জমা পড়ছিল জেলা পার্টির নেতাদের কাছে। তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা কমিটি ও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএম শ্যামল মাইতির বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন রবীন দেব। রবীন দেব রাজ্য সিপিএমের পক্ষ থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দায়িত্বে এবং শ্যামল মাইতি তাঁর বিশেষ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। নিজের অনুগামীর বিরুদ্ধে কমিশন চালু হওয়াকে ভালোভাবে নেননি সিপিএমের সেন্ট্রাল কমিটি এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব।
শুক্রবার রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র জানান, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সুপারিশের ভিত্তিতে হলদিয়ার অভিযুক্ত নেতা শ্যামল মাইতিকে জেলা কমিটি এবং জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শুধু সাধারণ পার্টি সদস্য হিসেবে থাকবেন। এই ঘোষণাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রবীন দেব। তিনি প্রশ্ন করেন, এটা কেন হল? কোন মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে?
এর জবাবে বিমান বসু জানান, ‘মিটিংয়ে তো শ্যামল মাইতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে মিনতি ঘোষ, সূর্যকান্ত মিশ্র ছিল। তুমি নিজের কথা বলে বেরিয়ে গেছ, তাও নোট আছে।’
এরপরও থামেননি রবীন দেব, তিনি রাগত স্বরেই বলেন, তবে আমাকে পূর্ব মেদিনীপুরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। আমি ওই জেলায় আর যাব না।’
তারপরও রবীন দেব কিছু বলার চেষ্টা করলে তাঁকে থামান মহম্মদ সেলিম। রীতিমতো ভর্ৎসনার সুরে তিনি বলেন, ‘তুমি মুখে মুখে তর্ক করছ কেন? তোমার কিছু বলার থাকলে সম্পাদকমণ্ডলীর মিটিংয়ে বলবে।’ এরপর চুপ করেন রবীন দেব।
সিপিএম পার্টির রীতি অনুযায়ী রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা সাধারণত কিছু বলেন না। সেখানে বলার এক্তিয়ার রাজ্য কমিটির সদস্যদের। রীতিবিরুদ্ধ ভাবে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সেখানে মুখ খোলায় অনেকেই বিস্মিত।
তবে রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে এক জেলার এক সাধারণ নেতাকে বাঁচাতে যেভাবে রবীন দেবের মতো কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য বিমান বসুর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লেন তারও কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই। ইয়েচুরির সামনে ঘটা এই ঘটনায় বিড়ম্বনায় খোদ সূর্যকান্ত মিশ্রও।

Comments are closed.