স্টেরয়েড ব্যবহারে করোনা চিকিৎসায় বড় সাফল্য ব্রিটেনে, আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরিতে আশাবাদী বিশ্বের একাধিক সংস্থা

‘বিরাট সাফল্য’, করোনা চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহারে উচ্ছ্বসিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। ডেক্সামেথাসন (dexamethasone) ব্যবহারে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে করোনার মৃত্যুহার, বলছে ব্রিটেনের গবেষণা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সে দেশে মহামারির শুরু থেকে এই ড্রাগের ব্যবহারে অন্তত ৫ হাজার করোনা সংক্রমিত সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

অন্যদিকে, আমেরিকা ও জার্মানির সংস্থার ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাবে অক্টোবরের মধ্যে, জানাচ্ছে ফাইজার (Pfizer)। জার্মানির ফার্মা সংস্থা CureVac শুরু করে দিয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক তৈরিতে কোন দেশের কোন সংস্থা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?

ডেক্সামেথাসনের ব্যবহার

অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি লো কস্ট ড্রাগ ডেক্সামেথাসনকে করোনা চিকিৎসায় নয়া বাজি ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীদের এক তৃতীয়াংশের মৃত্যুর আশঙ্কা কমিয়ে দিতে পারে এই স্টেরয়েড, জানাচ্ছেন ব্রিটেনের এক বিশেষজ্ঞ দল। মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এই স্টেরয়েড শুধু আশঙ্কাজনক রোগীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মাঝারি সংক্রমিতদের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল জেনারেল টেড্রোস আধানম  গেব্রেয়ুসুস বলেন, অক্সিজেন বা ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে এই স্টেরয়েডই প্রথম তাৎপর্যপূর্ণভাবে কাজ করছে। অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞরাও এই স্টেরয়েডের ব্যবহার আশাব্যঞ্জক বলে মনে করলেও আমেরিকা মানছে না। তারা এই বিষয়ে আরও তথ্য চাইছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মডার্না, চিনের সিনোভেক বায়োটেক এবং ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনের পরবর্তী প্রয়োগ আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই হতে চলেছে। যদি সব ঠিকঠাক চললে নভেম্বরের মধ্যেই জরুরিকালীনভাবে করোনা প্রতিষেধক ব্যবহার করতে পারবে সবাই। ব্রিটেন ও আমেরিকা লক্ষ লক্ষ ডলার ঢেলেছে হয়েছে করোনা প্রতিষেধক তৈরিতে। যার মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ অনেক এগিয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলি। সব  মিলিয়ে ভ্যাকসিন তৈরিতে কে কোথায় দাঁড়িয়ে এখন?

চিনের সিনোফার্ম

চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ (CNBG), যা সিনোফার্ম নামে অধিক পরিচিত, জানাচ্ছে, পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারে তাদের ভ্যাকসিন ভালো ফল দিচ্ছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে।

জার্মানির CureVac

জার্মানির বায়োটেক ফার্ম CureVac ইতিমধ্যে হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছে। তাদের এই প্রতিষেধক ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন ১৬৮ জন শারীরিকভাবে সক্ষম স্বেচ্ছাসেবী, যার মধ্যে ১৪৪ জনের শরীরে প্রবেশ করানো হবে কিউর ভ্যাক প্রতিষেধক। mRNA র উপর ভিত্তি করে সম্পূর্ণ নতুন এক টেকনোলজির ব্যবহার করছে জার্মানির এই বায়োটেক ফার্ম। ভ্যাকসিন তৈরিতে এর আগে কখনও এমন প্রযুক্তি ব্যবহার হয়নি।

আমেরিকার Pfizer-জার্মানির BNTECH এর ভ্যাকসিন

আমেরিকার বিখ্যাত ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা ফাইজার (Pfizer) এবং জার্মানির BNTECH সংস্থা মিলিত উদ্যোগে যে ভ্যাকসিন তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছিল, তার কাজও অনেকটাই এগিয়েছে বলে খবর। এখন আমেরিকা ও জার্মানির রোগীদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট মাত্রায়। ফাইজারের বিশ্বাস, ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যেই তারা করোনা ভ্যাকসিন প্রস্তুত করে ফেলবে।

রাশিয়ার করোনাভাইরাস প্রতিষেধক

রুশ স্বাস্থ্য দফতর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, করোনা ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছে তারা। পাউডার এবং তরল, দুই প্রকারের ভ্যাকসিন তৈরি করেছে মস্কোর গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট। দুটি পৃথক গ্রুপে ৩৮ জন করে স্বেচ্ছাসেবীর উপর এই প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হচ্ছে। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা TASS গামেলিয়া সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজির ডিরেক্টর অধ্যাপক আলেকজান্ডার গিনজবার্গকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এই হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য মোটামুটি দেড় মাস সময় লাগবে। রাশিয়ার দাবি, এখনও পর্যন্ত তাদের তৈরি এই ভ্যাকসিনের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সব মিলিয়ে বহু দেশই আগামী এক বছরের মধ্যে কার্যকরী কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী।

Comments are closed.