অদম্য জেদ আর অধ্যাবসায়, মুম্বইয়ের পোলিও আক্রান্ত গীতা দেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্যারা অলিম্পিক মেডেলের

মুম্বইয়ের গীতা চৌহান। ২৮ টি চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েও চাকরি জোটেনি শুধুমাত্র তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য। পোলিও আক্রান্ত গীতা কখনও স্বাধীন ব্যবসা করেছেন, আবার কখনও খেলাধুলোকে নিজের পেশা করতে চেয়েছেন। হুইলচেয়ারকে সঙ্গী করে আগামী প্যারা অলিম্পিকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চলা মহারাষ্ট্র হুইলচেয়ার বাস্কেটবল খেলোয়াড় গীতা চৌহানের হার না মানা জীবনযুদ্ধ অনুপ্রেরণা যোগাবে বহু মানুষকে ।
৬ বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত গীতা দুই পায়ের শক্তি হারান। গরিব পরিবারে বাড়তি বোঝা হিসেবে গীতার দিন কাটছিল। কিন্তু বাড়িতে নিত্য গঞ্জনা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাধার মুখে কখনও ভেঙে পড়েননি গীতা চৌহান। বরং কারও গলগ্রহ হয়ে বাঁচবেন না বলে ঠিক করে নিয়েছিলেন। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে পড়াশোনা করিয়ে বাড়তি খরচ করতে চাননি গীতার দরিদ্র বাবা। চেয়েছিলেন ঘরের চার দেওয়ালেই মেয়ের জীবনকে বেঁধে রাখতে। কিন্তু কিছু করে দেখানোর জেদ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন গীতা। এম কম পাশ করে চেষ্টা করেছেন উপার্জনের। কিন্তু না, সাফল্য সহজে আসেনি। ২৮ টি চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েও শুধু তাঁর হুইলচেয়ারের জন্য একটি চাকরিও হয়নি। পাশাপাশি বাড়ির কেউ চাননি হুইলচেয়ারকে সঙ্গী করে অফিস যাক মেয়ে। অন্যদিকে তাঁর অসাড় পায়ের জন্য কোনও সংস্থাই রাজি হয়নি গীতাকে চাকরি দিতে। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কলেজেরই এক সহপাঠী। স্বাধীনভাবে কিছু করতে, সুজিত নামে সেই বন্ধু লাগাতার তাঁকে সাহস যোগাতেন। সুজিতের কথায় এরপর স্বাধীনভাবে ব্যবসা শুরু করেন গীতা। দু’জনে ঠিক করে ফেলেন চাকরি পেলেই বিয়ে করবেন। কিন্তু বিধি বাম। ২০১২ সালে বেঙ্গালুরুতে চাকরি করতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সুজিতের। গীতা ডিপ্রেশন থেকে বেরোতে কাজ খুঁজেছেন হন্যে হয়ে, কিন্তু পাননি। অগত্যা নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করেন খেলাধুলো। আর এভাবেই বাস্কেটবলে ভালবাসা জন্মায় তাঁর। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অদম্য জেদ গীতাকে দেশের হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিমে সুযোগ করে দেয়। জাতীয় স্তরে ৪ টি মেডেল জয়ী গীতা চৌহানের পাখির চোখ এখন প্যারা অলিম্পিকে দেশকে পদক এনে দেওয়া।
২০১৮ সালে ব্যাঙ্ককে প্রথম আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সুযোগ মেলে। এবছর মার্চে কোয়ালিফাই করেছেন প্যারা অলিম্পিকে।

জীবনে একের পর এক ধাক্কা খেতে খেতে হুইলচেয়ারকে ভরসা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন গীতা চৌহান। তাঁর কথায়, জীবনে একজন কী করবেন, তা অন্যেরা নয় ,তাঁকে নিজেকেই নির্ধারণ করতে হবে। শুধু আত্মবিশ্বাস থাকলে একের পর এক প্রতিকূলতা হেলায় পেরনো যায়, মন্তব্য হুইলচেয়ার বাস্কেটবল প্লেয়ার গীতা চৌহানের।

 

Comments are closed.