৭০ ছুঁইছুঁই সুধা মহালিঙ্গম ২৮ বছরে একাই ঘুরে ফেলেছেন ৬৫ টি দেশ, কখনও তাবু খাটিয়ে, কখনও থেকেছেন রাস্তার সরাইয়ে

কথায় আছে চল্লিশ পেরোলেই চালসে। কিন্তু ৬৮ বছরের সুধা মহালিঙ্গমের ক্ষেত্রে এই ‘তত্ত্ব’ খাটে না। চেন্নাইয়ের বাসিন্দা প্রাক্তন সাংবাদিক সুধা মহালিঙ্গম পৃথিবী ভ্রমণের নেশায় বুঁদ হয়েছিলেন ৪০ পার করেই। কয়েক বছরের মধ্যে ৬৫ টি দেশ ভ্রমণ করে ফেলেছেন ৬৮ বছরের সুধা।

ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো, বিরল মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার। কিন্তু পেশাগত ও সাংসারিক জীবনের দায়-দায়িত্ব সামলে নিজের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বয়স চল্লিশ পেরোতেই চাকরি ছাড়েন। পাকাপাকিভাবে ইচ্ছাপূরণে মন দেন সুধা মহালিঙ্গম।

তবে বেড়াতে গিয়ে পাঁচতারা বা তিনতারা হোটেলে থেকে ছুটি উপভোগ করা বা গাড়ি বুকিং করে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখা নয়, অ্যাডভেঞ্চারিস্ট সুধা মহালিঙ্গম দেশ-বিদেশের বিখ্যাত থেকে অখ্যাত গ্রামে বেড়াতে ভালোবাসেন। প্রকৃতির রুক্ষ্ম থেকে সুন্দরতম স্থানের বাস্তবতা উপভোগ করতে ভালোবাসেন। থাকতে ভালোবাসেন সস্তার কোনও সরাইখানা বা তাঁবুতে।
একটার পর একটা জায়গা বেড়াতে বেড়াতে ক্রমশ পৃথিবী ভ্রমণের নেশা পেয়ে বসে সুধাকে। ইতিমধ্যে ৬৫ টি দেশে ভ্রমণ শেষ করে ফেলেছেন সুধা মহালিঙ্গম। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ‘সোলো ট্রিপ’ এর স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। সেবার কৈলাস মানস সরোবরে ৩২ দিনের ভ্রমণে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর বড় শহরের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান থেকে অখ্যাত কোনও গ্রাম, একলাই ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রাক্তন এই সাংবাদিক। ভ্রমণকালে কখনও শুকনো খাবার বা চা, কফি নেন না এই প্রৌঢ়া। যে জায়গায় বেড়াতে যান সেখানকার স্থানীয় খাবার পরখ করাই তাঁর শখ।

কোনও ভিন্ন দেশের অজানা নির্জন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া থেকে কাশ্মীরে গোলাগুলির মাঝে পড়ে যাওয়া, সুধা মহালিঙ্গমের ভাঁড়ারে রয়েছে অসংখ্য ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা। তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা স্থান পায় দেশের বিভিন্ন ভ্রমণ পত্রিকায়। সুধার কথায়, মজার ব্যাপার হল এক দেশের অভিজ্ঞতার কথা লিখে যে পারিশ্রমিক পাই, তা লেগে যায় অন্য কোনও দেশ ভ্রমণে।
সুধা মহালিঙ্গমের এই হঠাৎ বেরিয়ে পড়া নিয়ে প্রথমে দারুণ চিন্তায় থাকতেন স্বামী ও সন্তানরা। এখন অবশ্য কোথাও বেরিয়ে পড়লে আর প্রশ্ন করেন না তাঁরা, বরং উৎসাহ যোগান। আর বাড়ি ফিরলে শুনতে চান তাঁর নতুন অভিজ্ঞতার কথা।
৬৮ বছরের এই প্রাক্তন সাংবাদিকের কথায়, যে কোনও বাধা বা সীমারেখাই আসলে স্ব-আরোপিত। বেড়াতে বেরলেই বোঝা যায় আমরা নিজেদের শক্তি সম্পর্কে যতটা ওয়াকিবহাল তার থেকে অনেক বেশি কিছু করতে পারি।

Comments are closed.