জামিয়ার কাছে পুলিশের সামনেই পড়ুয়াদের তাক করে গুলি রামভক্ত কিশোরের, জখম ১

দিল্লির জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত পড়ুয়াদের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জবাবদিহি চাইল কংগ্রেস। শুক্রবার সকালে এক ট্যুইটারে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মোদীর উদ্দেশে লেখেন, প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে, তিনি এই দিল্লিই দেখতে চান কি না। তাঁকে পরিষ্কার বলতে হবে, তিনি এই হিংসার পক্ষে না বিপক্ষে? কংগ্রেস নেত্রী আরও লেখেন, বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা যে ধরনের প্ররোচনা এবং উস্কানিমূলক ভাষণ দেন, তাতে এই ধরনের ঘটনা তো ঘটবেই।
এদিকে এদিনও সকাল থেকে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। দিল্লি পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান ওঠে ওই বিক্ষোভ থেকে। সকালে পড়ুয়ারা দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনেও বিক্ষোভ দেখান। পরে পুলিশ তা তুলে দেয়। ঠিক কী ঘটেছিল বৃহস্পতিবার দুপুরে? জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ নম্বর গেট থেকে মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণ দিবসে রাজঘাট পর্যন্ত মিছিল করার কথা ছিল পড়ুয়াদের। মিছিল আটকাতে রাস্তায় ছিল পুলিশের ব্যারিকেড। পুলিশের সামনেই এক কিশোর দেশি পিস্তল তাক করে মিছিলকে শাসাতে থাকে। তাঁর গলায় ছিল ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। আবার কখনও তাকে বলতে শোনা যায়, আজাদি চাহিয়ে? ইয়ে লো আজাদি। এর পরই পুলিশের দিকে পিছন করে সে গুলি চালায়। তাতে জখম হন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া। পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। পিছিয়ে যেতে যেতে পুলিশের কাছাকাছি যাওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনার আগে কিশোরটি ফেসবুকে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের উদ্দেশ্য করে নানা হুমকিমূলক পোস্ট করে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম গোপাল শর্মা। তার ফেসবুক তথ্য বলছে, নিজেকে সে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বলেই পরিচয় দেয় সে।
দিল্লিতে দিন দুয়েক আগে ভোটের প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর শাহিন বাগ সহ দিল্লির অন্যান্য প্রান্তে এনআরসির বিরোধী যে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে গদ্দার এবং গুলি করে মারার স্লোগান দিয়েছিলেন। তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছিল তাঁর মন্তব্যে। অনুরাগের গ্রেপ্তারির দাবি করেছিলেন বিরোধীরা। অনুরাগের সেই উস্কানিমূলক মন্তব্যের একদিন পরেই গান্ধীজির মৃত্যুদিনেই এই নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল দিল্লির বিড়লা হাউসের থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরের জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।
ওই ঘটনার পর অভিযুক্তের ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্ট ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে সে নিজেকে রামভক্ত গোপাল বলেছে। কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন লেখার ছড়াছড়ি তার পোস্টে। ২৬ জানুয়ারি একটি পোস্টে সে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বলেও উল্লেখ করেছে। দিল্লি বিধানসভা ভোটের এক সপ্তাহ আগে দিল্লির বুকে এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে কেন্দ্র। বেকায়দায় পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, কড়া পদক্ষেপ করা হবে দোষীর বিরুদ্ধে। এসব বরদাস্ত করা হবে না। তিনি দিল্লির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন।

Comments are closed.