বন্ধ হচ্ছে আনন্দবাজার গোষ্ঠীর দ্য টেলিগ্রাফ কাগজের ঝাড়খণ্ড ও উত্তর-পূর্ব সংস্করণ, চাকরি হারাচ্ছেন ৩৫ জন

ক’দিন আগেই thebengalstory তে প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকায় বেতন কমানোর খবর। এবার কি ছাঁটাইও শুরু হয়ে গেল? এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে নিউজ পোর্টাল Newslaundry এর একটি প্রতিবেদন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই আর্টিকেলে দাবি করা হয়েছে, আনন্দবাজার গোষ্ঠীর ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের উত্তর-পূর্ব এবং ঝাড়খণ্ড সংস্করণ বন্ধ হতে চলেছে। এর ফলে বেকার হয়ে যাবেন অন্তত ৩৫ জন কর্মী। আগামী ৩১ মে ওই দুই সংস্করণ শেষবারের মতো প্রকাশিত হবে।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, বুধবার দ্য টেলিগ্রাফের এডিটর আর রাজাগোপাল ফোন করে কর্মীদের এই সংবাদ দেন। ছাঁটাই হতে চলা কর্মীদের ৩ থেকে ৯ মাসের বেসিক এবং ১০ বছরের বেশি কাজ করা কর্মীদের গ্র্যাচুইটি দেওয়া হবে। তবে কর্মীরা জানিয়েছেন, গোটা ব্যাপারটি এখনও মৌখিক স্তরে রয়েছে। লিখিতভাবে কলকাতা থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। সূত্রের খবর, এর ফলে ওই দুই ব্যুরোর ৩৫ জনেরও বেশি কর্মী কাজ হারাবেন। তার মধ্যে ২৫ জনেরও বেশি রয়েছেন ঝাড়খণ্ডে এবং ১০ জন টেলিগ্রাফের উত্তর-পূর্ব সংস্করণে।
দ্য টেলিগ্রাফের ঝাড়খণ্ড এডিশনে কর্মরত এক কর্মীকে উদ্ধৃত করে Newslaundry এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের বলা হয়েছে পত্রিকা এখন অর্থের অভাবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশব্যাপী লকডাউনের পর থেকে রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে গিয়েছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ভুবনেশ্বর এবং পাটনা ব্যুরো বন্ধ করে দিয়েছিল দ্য টেলিগ্রাফ। তারপর ফের একবার এমন ঘটনা ঘটল। আবার ২০১৭ সালে এবিপি গোষ্ঠী প্রায় ৩০০ কর্মীকে ছাঁটাই করেছিল। সেই সময় দ্য টেলিগ্রাফের গুয়াহাটি এডিশনে চাকরি যায় ১১ জনের।
ছাঁটাই হতে চলা কর্মীদের মধ্যে যেমন সাংবাদিক রয়েছেন, তেমনই অ-সাংবাদিক কর্মীরাও আছেন। রাঁচি ও জামশেদপুরের সমস্ত সম্পাদকীয় কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। চাকরি হারাতে চলেছেন জামশেদপুরের ব্যুরো চিফও। কাগজের মার্কেটিং এবং অ্যাড বিভাগে কর্মরতরাও রেহাই পাননি বলে Newslaundry প্রতিবেদনে বলেছে।
অন্যদিকে, উত্তর-পূর্ব সংস্করণের মূলকেন্দ্র গুয়াহাটি ব্যুরোতে চাকরি বাঁচাতে পেরেছেন একমাত্র ব্যুরো চিফ। ওই ব্যুরোতে মোট ৬ জন সাংবাদিক ছিলেন। তাঁদের সকলের ক্ষেত্রে ৩১ মে দ্য টেলিগ্রাফে শেষদিন। Newslaundry র প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের এমন আচমকা সিদ্ধান্তে বিস্মিত কর্মীরা।
প্রতিবেদনে ছাঁটাই হতে চলা এক সাংবাদিককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সঙ্কটের আগে উত্তর-পূর্ব ভারতে টেলিগ্রাফের সার্কুলেশন ছিল প্রায় ৩০ হাজার। ঝাড়খণ্ডে ২০ হাজারেরও বেশি।
দ্য টেলিগ্রাফের ঝাড়খণ্ডের কর্মীদের একাংশ মনে করেন, ব্যুরো বন্ধ করে দেওয়ার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ কর্মীদের বেতন কাটতে পারতো। এর পিছনে যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলছেন, লকডাউনের প্রথম পর্বে যে সার্কুলেশন একদম পড়ে গিয়েছিল তা মিথ্যে নয়। কিন্তু ক্রমশ তা বাড়ছিল।
গুয়াহাটি ব্যুরোতে কর্মরত এক কর্মীও কার্যত একই কথা বলছেন। তাঁর বক্তব্য, লকডাউনের শুরুতে মানুষ খবরের কাগজ কিনছিলেন না। তাই আমাদের সার্কুলেশন তলানিতে পৌঁছেছিল। দৈনিক ২ হাজারে এসে পৌঁছেছিল সার্কুলেশন। কিন্তু ক্রমশ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এখন সার্কুলেশন বেড়ে পৌঁছেছে ৭ হাজারে।
Newslaundry র প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দ্য টেলিগ্রাফের এডিটর আর রাজাগোপাল এবং এবিপি গোষ্ঠীর সিইও এবং এমডি দীপঙ্কর দাস পুরকায়স্থের কাছে এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁদের তরফে জবাব এলেই তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।
এ মাসের শুরুর দিকে সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা দিয়ে ইন্ডিয়ান নিউজপেপার সোসাইটি দাবি করে, সংবাদপত্রগুলোয় সরকারি বিজ্ঞাপন কমেছে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ এবং অন্যান্য বিজ্ঞাপন কমেছে ৯০ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে সংবাদপত্রগুলোকে সর্বসান্ত হওয়া ঠেকাতে সরকারের তরফে আর্থিক সহায়তা দাবি করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সংবাদমাধ্যমে বেতন কমানো এবং ছাঁটাই চলছে। এই তালিকায় যেমন রয়েছে দ্য হিন্দু বা দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র, তেমনই রয়েছে ক্যুইন্টের মতো নিউজ পোর্টালও। বাংলাতেও টাইমস গোষ্ঠীর দৈনিক এই সময়ে বেতন কমানো এবং ছাঁটাইয়ের খবর এসেছে। আজকাল পত্রিকায় বেতন কমানোর খবরও জানা গিয়েছে। এবার পুরোদস্তর ব্যুরো বন্ধ করে দেওয়ার খবর প্রকাশিত হল।

Comments are closed.