সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য টেন্ডার ডাকল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সংস্থা

ভুয়ো খবরের রমরমা রুখতে অভিনব পদক্ষেপ তথ্য ও সম্প্রচায় মন্ত্রকের অধীনস্থ ব্রডকাস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টস ইন্ডিয়া লিমিটেড (BECIL) এর। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা তথ্য যাচাই এবং ভুয়ো খবর চিহ্নিত করা ও রোখার ব্যাপারে টেন্ডার ডেকেছে তারা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর ও তথ্যের বিরুদ্ধে লড়তে অর্থাৎ ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য যে সংস্থাগুলি বরাত পেতে ঝাঁপাচ্ছে, BECIL এর শর্ত, তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে ওই ভুয়ো তথ্যের পিছনে কার মস্তিষ্ক কাজ করছে, তাও। সেই সঙ্গে যেখান থেকে এই ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে তার জিও-লোকেশন বা ভৌগোলিক অবস্থান জানার মতো টেকনোলজি থাকতে হবে টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী সংস্থাকে।

কিন্তু এভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যে হানা দেওয়া হবে না তো? এভাবে অনৈতিক নজরদারির পথ খুলছে না তো? এমনই প্রশ্ন তুলেছেন কিছু সাইবার বিশেষজ্ঞ। তাঁদের যুক্তি, কোনটা ফেক নিউজ আর কোনটা নয়, সেটাই যদি আমরা না জানি তবে বরাত পাওয়া এজেন্সি কীভাবে সত্য ও মিথ্যা তথ্যের পার্থক্য নির্ধারণ করবে? ফেক নিউজ বুঝতে ঠিক কোন তথ্য যাচাই ও সনাক্ত করা হবে? তাঁদের অভিযোগ, এভাবে অবৈধ এবং অনৈতিক নজরদারির একটি পন্থা উন্মুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে অবশ্য এখনই মুখ খুলছে না তথ্য ও সম্পচার মন্ত্রকের অধীনস্থ BECIL। ফেক নিউজ কিংবা ভুয়ো তথ্যের সংজ্ঞা কী হবে, কোন কোন সংস্থাই বা এই নিলামে অংশ নিয়েছিল তা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি তারা। তবে ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক সূত্রে খবর, সোশ্যাল মিডিয়া রেগুলেশন ২০২০ এর গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে। মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানান, এখন আমরা ফেক নিউজের গাইডলাইন নিয়ে কাজ করছি। মূলস্রোতের মিডিয়ায় বা অন্য কোনও মাধ্যম থেকে ছড়ানো কোনও খবরের ফ্যাক্ট চেকিং করে দেখছে প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো (PIB)। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তথ্য সঠিক কিনা এবং তা কীভাবে বোঝা যাবে এ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে বলে জানান ওই মুখপাত্র।

হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ট্যুইটার ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগে বারবার সরকার পক্ষ আঙুল তুলেছে। যদিও সম্প্রতি ভুয়ো ট্যুইট যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। হোয়াটসঅ্যাপেও ফরওয়ার্ড মেসেজে এসেছে নিষেধাজ্ঞা। তা সত্ত্বেও ভুয়ো খবরের রমরমা ঠেকানো যায়নি।

ফ্যাক্ট চেকিং প্ল্যাটফর্ম AltNews এর প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহার মতে কোন প্রভাবশালী এই মিথ্যে খবর ছড়ানোয় জড়িত তা চিহ্নিত করা সহজ নয়। তাঁর কথায়, আপনি কীভাবে এই প্রভাবশালীদের সনাক্ত করবেন? এমন নয় যে লোকেরা সবসময় ভুল তথ্য প্রকাশের ইচ্ছা নিয়ে তা ছড়ায়। একরকম ভয় এবং ভুল ধারণা থেকেও তারা এ কাজ করতে পারে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তারা ইচ্ছাকৃত কিছু ভুল তথ্য ছড়াতে চেয়েছিল। আমরা ভুল তথ্যের সাথে জড়িত। তাই আসল প্রভাবশালীদের চিহ্নিত করা তাই অত্যন্ত কঠিন। এই প্রেক্ষিতে সবচেয়ে কার্যকরী হবে সচেতনতামূলক প্রচার, মত প্রতীক সিনহার।

 

Comments are closed.