নন্দীগ্রামে হারলেও অবিভক্ত মেদিনীপুরে ৭৫% স্ট্রাইক রেট মমতার! কেমন ফল জঙ্গলমহলে?

ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী

২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছিল বিজেপি। মূলত জঙ্গলমহল এবং উত্তরবঙ্গে বিজেপির উত্থান ছিল অভুতপূর্ব।

ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি ছিল অবিভক্ত মেদিনীপুরের ৩৫ টি আসনই জিতবেন বিজেপি প্রার্থীরা। বালি মাটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন শুভেন্দু নিজে, লাল মাটির দায়িত্ব বর্তেছিল দিলীপ ঘোষের উপর।

রবিবার ফল বেরিয়েছে ভোটের। আসুন দেখে নেওয়া যাক, জঙ্গলমহলে বিজেপির ফল কেমন? কেমন পারফরমেন্স বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায়।

পূর্ব মেদিনীপুর (মোট আসন ১৬)
প্রথম দফায় পূর্ব মেদিনীপুরে ৭ টি আসনে ভোট হয়। উনিশে লোকসভা ভোটে বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে এই ৭টি আসনের মধ্যে ৬টিতেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল। শুধুমাত্র পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বিজেপি।

কিন্তু ২০২১ দেখা যাচ্ছে এই ৭টি আসনের মধ্যে ৪টি তে জয়লাভ করে বিজেপি। বাকি ৩টিতে জয় পায় তৃণমূল।

দ্বিতীয় দফায় পূর্ব মেদিনীপুরে ৯টি আসনে ভোট হয়। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে এই ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিতে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভায় শুধুমাত্র ৩০০০ ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি।

একুশে নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ৯ টি আসনের মধ্যে ৬ টিতে জয় লাভ করে তৃণমূল। অন্যদিকে উনিশে যেখানে একটি কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বিজেপি একুশের নির্বাচনে সেখানে তারা তিনটি আসনে জয় পায়।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ১৬ টি আসনের মধ্যে ৭টি আসনে জয় পেয়েছে গেরুয়া শিবির। ৯ আসন জিতেছে তৃণমূল।

পশ্চিম মেদিনীপুর (মোট আসন ১৫)
পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রথম দফায় ৬ টি আসনে ভোট হয়। উনিশের লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে ছয়টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বিজেপি। দুটি আসনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল।

কিন্তু একুশের ফলাফলে ওই ৬টি আসনের চিত্রই সম্পূর্ণ বদলে যায়। একুশের বিধানসভা ভোটে সবকটি আসনেই শাসক দল তৃণমূল জয়লাভ করে।

কিছুটা একই অবস্থা দ্বিতীয় দফায় আসনগুলিতেও। দ্বিতীয় দফায় পশ্চিম মেদিনীপুরে ৯টি আসনে ভোট হয়। উনিশের লোকসভা ভোটের নিরিখে ৯টির মধ্যে ছয়টি আসনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল, তিনটি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি।

কিন্তু একুশের বিধানসভা ভোটে নয়টি আসনের মধ্যে ৭টি যে জয় পায় রাজ্যের শাসক দল। বাকি ২টি তে জয়লাভ করে বিজেপি।

পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৫টি আসনের মধ্যে লোকসভা ভোটে আটটি আসনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল এবং ৬টি আসনে বিজেপি। কিন্তু একুশের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে মাত্র ২টি আসনে জয় লাভ করেছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূল জিতেছে ১৩ টি আসন।

ঝাড়গ্রাম (মোট আসন ৪)
উনিশের লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু একুশের বিধানসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলার ফলাফল পুরো ওলটপালট। ৪ টি বিধানসভাতেই জয় তৃণমূলের।

অর্থাৎ অবিভক্ত মেদিনীপুরের ৩৫ আসনের মধ্যে মাত্র ৯ টি আসন জিততে সক্ষম হয়েছ বিজেপি। বাকি ২৬ টি আসন জিতেছে তৃণমূল। তারমধ্যে ঝাড়গ্রাম জেলায় ক্লিন সুইপ তৃণমূলের। অবিভক্ত মেদিনীপুরের ৩৫ আসনে তৃণমূলের স্ট্রাইক রেট প্রায় ৭৫%।

পুরুলিয়া (মোট আসন ৯)
পুরুলিয়ার প্রথম দফায় ৯টি আসনে ভোট হয়। গত লোকসভা ভোটে এই জেলায় ৯ টি আসনের মধ্যে ২টি আসনে তৃণমূল এগিয়েছিল, বাকি ৭টি আসনে এগিয়েছিল বিজেপি।

একুশের ফলাফলেও তার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। ৯টি আসনের মধ্যে ৩ টিতে জয়লাভ করে তৃণমূল বাকি ৬ টি আসন নিজেদের দখল রাখে গেরুয়া শিবির।

বাঁকুড়া (মোট আসন ১২)
জেলার চার আসনে প্রথম দফায় ভোট হয়। উনিশের লোকসভা ভোটে ওই চারটি আসনেই এগিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু একুশের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় চারটির মধ্যে দুটিতে তৃণমূল এবং দুটিতে বিজেপি জয়লাভ করেছে।

দ্বিতীয় দফায় বাঁকুড়ায় ৮টি আসনে ভোট হয়। উনিশের লোকসভা ভোটের নিরিখে আটটি আসনেই লিড ছিল বিজেপির। সেখানে ৬ টি আসন জিতেছে বিজেপি।

একুশের বিধানসভা ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে বাঁকুড়া জেলায় বিজেপি ৮ টি আসনে জয়লাভ করেছে এবং তৃণমূল ৪ টি আসনে জয় পেয়েছে।

অর্থাৎ অবিভক্ত মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া-পুরুলিয়া মিলিয়ে এই এলাকার মোট ৫৬ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ৩৩ টি। সেখানে বিজেপি জিততে পেরেছে মাত্র ২৩ টি আসনে। সাফল্যের হার প্রায় ৫৯%। জঙ্গলমহল এলাকায় বিপুল লোকসান বিজেপির বাংলা জয়ের স্বপ্নে মূল বাধা হয়ে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

Comments are closed.