কাউকে আশীর্বাদ করলেন, কাউকে জড়িয়ে ধরলেন; ত্রিপুরায় যেন অভিভাবকের আসনে অভিষেক

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে রাজনৈতিক মহলের একাংশের কাছে। মমতা ব্যানার্জির পর গেরুয়া শিবির প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে সবথেকে বেশি শব্দ খরচ করেছেন তাঁর জন্যই। ফল প্রকাশের পর দলে পুরস্কৃতও হয়েছেন। যুব সভাপতি থেকে তাঁকে সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। যে পদে পূর্বে অসীন ছিলেন সুব্রত বক্সী, মুকুল রায়ের মত বর্ষীয়ান নেতৃত্ব।

তবে রবিবার গোটা ত্রিপুরা সফরের ঘটনাক্রম দেখে রাজনৈতিক কারবারিদের এক পক্ষের মতে শীর্ষ পদের পাশাপাশি অভিষেক যেন দলের একজন অভিভাবকের আসনে নিজেকে উত্তীর্ণ করেছেন। দেবাংশু, জয়া, সুদীপদের উপর হামলার ঘটনায় শনিবার রাতেই অভিষেক ট্যুইট করে জানিয়েছিলেন তিনি ত্রিপুরা যাচ্ছেন।

রবিবার কাক ভোরে দেবাংশুদের গ্রেফতার করা হয়। আর বেলা ১২.৩০ এর মধ্যেই খোয়াই থানায় পৌঁছে যান অভিষেক ব্যানার্জি। কখনও পুলিশের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। কখনও আবার তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারির কাগজ কর্ম দেখতে চান। প্রশ্ন তোলেন, যদি পুলিশ তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করতে পারে তবে একই যুক্তিতে বিজেপি জমায়েতকারীদের গ্রেফতার নয় কেন? পুলিশকে তাঁর তীব্র কটাক্ষ, আপনাদের কাঁধে অশোক স্তম্ভ রয়েছে পদ্মফুল নয়। আর এসবের মধ্যেই বার বার বলতে থাকেন যতক্ষণ না তৃণমূল কর্মীরা জামিন পাচ্ছেন তিনি থানা ছেড়ে নড়বেন না।

রাজনৈতিক কারবারিদের মতে অভিষেকের এই ‘জেদ’, দলীয় কর্মীদের আগলে রাখা সবকিছুর মধ্যেই যেন তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা ব্যানার্জির ছাপ। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় ধৃত তৃণমূল নেতাদের। তখনও থানায় বসে রয়েছেন অভিষেক। বাইরে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল।

শেষে ৪.৪৮ এ জামিন পায় দেবাংশুরা। ছাড়া পেয়ে দেবাংশু, সুদীপ অভিষেকের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন। তাদের জড়িয়ে ধরেন ডায়মণ্ড হারবারে দু’বারের সাংসদ। পিঠ চাপড়ে দেন দুই যুব নেতার। জয়া প্রণাম করলে তাঁর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন তিনি। সারাদিনের টানটান উত্তেজনার শেষে যেন এক বিরল ছবি। জয়া, সুদীপদের নিয়ে যখন থানা ছাড়ছেন তখন ঘড়িতে সন্ধ্যে ৬টা।

কথা মতো ধৃত নেতৃত্বদের জামিন করিয়েই থানা থেকে বেরোলনেন অভিষেক।
আর এই দৃশ্য দেখেই অনেকে বলছেন, নেতৃত্ব দানের পাশাপাশি কোথাও যেন দেবাংশু-সুদীপদের অভিভাবকের আসনে অভিষেক ঘটল তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের।

Comments are closed.