বস্তারের পর মাওবাদীদের নয়া ঘাঁটি কি অমরকণ্টক? গোয়েন্দা খবরে উদ্বেগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক

বস্তারের পর এবার কি অমরকণ্টক? ছত্তিসগঢ় পুলিশের কাছে এখন এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। পুলিশ সূত্রে খবর, সিপিআই মাওবাদী নতুন ঘাঁটি এলাকা তৈরি করতে এগোচ্ছে। বস্তারের পর এবার মাওবাদীদের টার্গেট অমরকণ্টকের ঘন জঙ্গল। কৌশলগতভাবে যে এলাকা দখলে থাকলে সংগঠনের কাজ চালানো সহজ হবে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিসগঢ়ে (মাওবাদী পরিভাষায় এমএমসি)।
মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিসগঢ়ের সীমানায় বিন্ধ্য, মাইকাল এবং সাতপুরা রেঞ্জ। এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে নর্মদা নদী। গোটা এলাকাটি পরিচিত অমরকণ্টক নামে। যা হিন্দুদের তীর্থস্থান হিসেবে বিখ্যাত।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় মাওবাদীদের গতিবিধি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানা গিয়েছে। কানহা টাইগার রিজার্ভ এলাকাতেও মাওবাদীদের উপস্থিতির খবর বারবার গিয়েছে পুলিশের কাছে। পুলিশ সূত্রে খবর, সিপিআই মাওবাদীর নেতৃত্ব গোটা জঙ্গল এলাকায় বিস্তারিত রেইকি সেরে ফেলেছে। কোথায় জলের যোগান মিলবে কিংবা কোথা থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধির উপর নজর রাখা যাবে, তা খতিয়ে দেখেছেন মাও নেতারা। তারপরই এই এলাকাকে ঘাঁটি এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাম মনোভাবাপন্ন চরমপন্থীরা।
পুলিশ জানাচ্ছে, মাওবাদীরা এই মুহূর্তে পাখির চোখ করেছে স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস জেতাকে। স্থানীয়দের সঙ্গে পেলে ঘাঁটি এলাকার তৈরির কাজ যে অনেকটাই এগিয়ে যাবে, তা বুঝতে পেরেই স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে ভারতের মাওবাদীরা। এতে পুলিশের গতিবিধি আগেভাগেই জেনে ফেলার পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন বিষয়েও কৌশলগত সহায়তা মাওবাদীরা স্থানীয়দের মাধ্যমে আদায় করে নিতে পারবে বলে মনে করছে ছত্তিসগঢ় পুলিশ। আর এখানেই ঘটেছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুস্থান টাইমসের এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে, অমরকণ্টক এলাকার সাধারণ মানুষের দাবি মেনেই সেখানে ঘাঁটি তৈরির তোড়জোড় শুরু করেছে মাওবাদীরা। যে কাজে মাওবাদী পার্টির হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমএমসির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দীপক তেলতুম্বডে।
এই প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, আত্মসমর্পণ করা মাওবাদীরা পুলিশকে জানিয়েছে, অমরকণ্টককে ঘাঁটি এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা মাওবাদীদের আজকের নয়। ২০১৬ সাল থেকেই সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে তারা। ২০১৬ সালে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে তৎকালীন এমএমসির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দীপক তেলতুম্বাডে এই প্রস্তাব পর্যালোচনা করেন। তারপরই অমরকণ্টকে ঘাঁটি এলাকা গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় নিষিদ্ধ সিপিআই মাওবাদী। গোটা কাজের ভার পড়ে দীপক তেলতুম্বাডের উপরই।
পুলিশ সূত্রে খবর, মাওবাদীদের সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য দীপকের মাথায় মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগঢ়, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড সরকার ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখনও অবধি দীপককে ছুঁতে পারেনি নিরাপত্তা বাহিনী। জানা গিয়েছে, মোট ১২ জন বডিগার্ড নিয়ে চলেন মাওবাদীদের সেন্ট্রাল কমিটির এই সদস্য। অব্যর্থ নিশানায় চালাতে পারেন প্রায় সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্র। সূত্রের খবর, মাইন কিংবা বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দীপকের হিম শীতল ঠান্ডা মাথার উপরই ভরসা করছে মাওবাদীরা।
আরও এই খবরই রক্তচাপ বাড়িয়েছে পুলিশ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। কারণ, অমরকণ্টক ফরেস্ট কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ঘাঁটি এলাকা গড়ে ফেললে, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশে কাজ চালানো সুবিধে হবে। পাশাপাশি এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়ার জন্যও ব্যবহার হবে এই করিডোর।
এদিকে প্রাকৃতিক বৈশিষ্টের কারণেই নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে প্রায় অগম্য অমরকণ্টক ফরেস্ট। ঝাড়খণ্ড ও বস্তার এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর অপারেশন এড়াতে অনেকেই এই এলাকায় আশ্রয় নিতে পারেন বলে মনে করছে পুলিশ।
পুলিশ কর্তাদের ভাবাচ্ছে আরও একটি বিষয়। তা হল, স্থানীয় বাসিন্দাদের ভরসা জেতার ব্যাপারে মাওবাদীরা এতটা এগিয়ে গেল কীভাবে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইপিএস অফিসার জানাচ্ছেন, ওই এলাকার আদিবাসীদের জমি থেকে উচ্ছেদ করার ঘটনা ঘটেছে। সরকারি বন দফতরের কাজকর্মেও ক্ষুব্ধ আদিবাসীদের একাংশ। মাওবাদীরা এই সুযোগকেই পরিপূর্ণ কাজে লাগিয়েছে। আর তাতে পুলিশের কাজ আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সরকারের এবিষয়ে নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন ওই সিনিয়র আইপিএস অফিসার। যা রক্তচাপ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।

Comments are closed.