পাকিস্তানকে ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’এর তকমা প্রত্যাহার ভারতের, কী সমস্যায় পড়বে ইমরান সরকার?

পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার পর পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ বা MFN তকমা তুলে নিয়েছে ভারত। শুক্রবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পাকিস্তানকে দেওয়া এই বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করে বলেন, পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোণঠাসা করে যোগ্য জবাব দেবে ভারত।
এই MFN স্টেটাস আসলে কী আর ভারত এই স্টেটাস তুলে নেওয়ার ফলে কোন বিড়ম্বনায় পড়তে পারে পাকিস্তান?
১৯৯৫ সালের ১ লা জানুয়ারি জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ বা গ্যাট-এর পরিবর্তে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন সংস্থা গড়ে ওঠে। এই ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন তার সদস্য দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সহজ করতে মোস্ট ফেভার্ড নেশন বা MFN স্টেটাস নিয়ে আসে।
একটি দেশ অন্য দেশকে MFN এর মর্যাদা দিলে, দুই দেশের মধ্যে বৈষম্যহীন বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি হয়, শুল্ক হ্রাস হয়। এমনকী বাণিজ্য ক্ষেত্রে একটি দেশ আর একটি দেশকে ঋণও দিতে পারে। তবে, একটি দেশ অন্য দেশকে MFN তকমা দিলেও, দ্বিতীয় দেশও যে প্রথম দেশকে সেই মর্যাদা দেবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
১৯৯৬ সালে ভারত পাকিস্তানকে MFN এর মর্যাদা দেয়। যদিও পাকিস্তান নানা অছিলায় ভারতকে MFN স্টেটাস দেয়নি। এই স্টেটাস না দেওয়ার কারণ হিসেবে তারা বেশিরভাগ সময় ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের তরফে বলা হয়, চিনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গেই তাদের বাণিজ্যিক চুক্তি রয়েছে, তাই আলাদাভাবে ভারতকে MFN তকমা দেওয়ার কথা ভাবছে না তারা।
এদিকে, পাকিস্তানকে দেওয়া এই মর্যাদা তুলে নেওয়ার জন্য ভারতে বিভিন্ন সময়ে দাবি উঠলেও, তা আলোচনা স্তরেই থেকে যায়। এমনকী, ২০১৬ সালে উরিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে নরেন্দ্র মোদী সরকার পাকিস্তানকে দেওয়া MFN স্টেটাস তুলে নেওয়ার কথা ভেবেছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। অবশেষে, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় শুক্রবার ভারত পাকিস্তানকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা হয়। পাকিস্তান থেকে ফল, মশলা, সিমেন্ট, চামড়াজাত দ্রব্য আমদানি করে ভারত। আর এদেশ থেকে পাকিস্তানে রফতানি হয় তুলো, রঞ্জক পদার্থ, রাসায়নিক দ্রব্য, স্টিল, লোহা ইত্যাদি। কম শুল্কে তা আমদানি করত পাকিস্তান।
কিন্তু MFN স্টেটাস তুলে নেওয়ার ফলে সেই সব সুবিধা আর থাকছে না পাকিস্তানের। এমনিতেই বৈদিশিক বাণিজ্যে বেশ পিছিয়ে রয়েছে ইমরান খান সরকার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রসঙ্গ টেনেই, শুক্রবার ঝাঁসির সভা থেকে তীব্র ভাষায় পাকিস্তানকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, পাকিস্তান যে রাস্তা বেছে নিয়েছে, সেই রাস্তাই পাকিস্তানকে আজ চরম বেহাল দশায় নিয়ে গিয়েছে। তারা ভিক্ষাপাত্র নিয়ে বিশ্বের সামনে হাত পাতলেও, কিছুই মিলছে না।

Comments are closed.