শাহিনবাগ: মধ্যস্থতাকারীদের দু’দিনের আলোচনার নিট ফল শূন্য, রাস্তা ছাড়বেন না জানিয়ে দিলেন আন্দোলনকারীরা

শাহিনবাগের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পর পর দু’দিন আলোচনা চালিয়ে কার্যত খালি হাতে ফিরতে হল সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত দুই মধ্যস্থতাকারীকে। আন্দোলনকারীরা প্রবীণ দুই আইনজীবী সাধনা রামচন্দ্রন এবং সঞ্জয় হেগড়েকে জানিয়ে দিলেন, তাঁরা শাহিনবাগের রাস্তা ছাড়বেন না। সরকার যদি সিএএ-এনআরসি ফেরানোর কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, একমাত্র তবেই অবস্থান থেকে উঠে যাবেন। না হলে নয়।

অবস্থানকারীদের মনে হয়েছে, দুই মধ্যস্থতাকারীকে কেবল রাস্তা ফাঁকা করার জন্যই পাঠানো হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ক্ষোভও এই জায়গাতেই। তাঁরা একযোগে বলে দিয়েছেন, সরকার যা খুশি করতে পারে। তাতে আমাদের কিছু যাবে আসবে না। আমরা লাঠি-গুলির সামনে বুক পাততেও রাজি আছি।
গত বুধবারের আলোচনায় দুই পক্ষই সন্তুষ্ট ছিল। মধ্যস্থতাকারী দুই আইনজীবী আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ, যন্ত্রণা, উদ্বেগের কারণ বোঝার চেষ্টা করেন। ৬৭ দিন রাস্তায় বসে থাকা বিভিন্ন বয়সের মহিলারা ওই দু’জনের কাছে তাঁদের যাবতীয় ক্ষোভ উগড়ে দেন। ক্ষুব্ধ অবস্থানকারীরা একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-এর কথা বলেন। আর তাঁর মন্ত্রীরাই ‘গোলি মারো শালো কো’ বলেন কী করে? কেউ প্রশ্ন করেন, শুধ মুসলিম বেছে বেছে আক্রমণ কেন? আমরা কি দেশের নাগরিক নই? কারও প্রশ্ন, শুধু রাস্তা আটকে থাকাটাই বড় সমস্যা? কেউ জানতে চান, ভোটার কার্ড যদি নাগরিকত্বের প্রমাণ না হয়, তা হলে আমাদের ভোটে সরকার গঠন হয় কী করে? কাউকে বলতে শোনা যায়, আজ যদি আমরা রাস্তা থেকে উঠে যাই, তা হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যখন জানতে চাইবে, অধিকার লুঠ হওয়ার সময় রুখে দাঁড়াওনি কেন, কী জবাব দেব আমরা? বস্তুত, দুই মধ্যস্থতাকারী এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি। হেগড়ে এবং রামচন্দ্রন জানান, তাঁরা এই বার্তা শীর্ষ আদালতের কাছে পৌঁছে দেবেন।
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শুরু হল দুই আইনজীবীকে গোলাপের পাপড়ি ছুড়ে অভিনন্দন জানিয়ে। কিন্তু দিনের শেষে নিট ফল হল শূন্য। দিনভর দফায় দফায় কথা হল। কখনও মধ্যস্থতাকারীরা বললেন, কে বলেছে, আপনারা দেশের নাগরিক নন? জনতার জবাব এল, নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহ। কখনও আইনজীবীরা বললেন, ভুল তো সবারই হতে পারে। জনতা করতালি দিয়ে উঠল। কিন্তু হেগড়ে এবং রামচন্দ্রন যখন অধিকারের কথা তুলে বললেন, প্রতিবাদ করা যেমন আপনাদের অধিকার, তেমনি রাস্তা ব্যবহার করাটা অন্যদেরও অধিকার, তা নিয়েই আমরা কথা বলব, তখনই বদলে গেল পরিবেশ। শাহিনবাগের ভিড় বুঝে গেল, এটাই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। এক আইনজীবী আবার পরের দিন থেকে ছোট ছোট দলের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিলেন। জনতা তাতে নারাজ। জনতার মধ্য থেকে নানা ধরনের আওয়াজ উঠতে শুরু করে দিয়েছে। এক সময় জনতা জানিয়ে দিল, অবস্থান উঠবে না। আন্দোলনকারীরা রাস্তাতেই থাকবেন। তাতে যা হয়, হবে।

Comments are closed.