চিন-আমেরিকা শুল্ক যুদ্ধের ডিভিডেন্ড ঘরে তুলতে ঝাঁপাচ্ছে ভারত, অ্যাপলের মতো সংস্থাকে বিনিয়োগের আহ্বান, বলছে রয়টার্সের প্রতিবেদন

আমেরিকা-চিন শুল্ক যুদ্ধের ডিভিডেন্ড ঘরে তুলতে ঝাঁপাচ্ছে ভারত। আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে তেমনই ইঙ্গিত। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চিনে তৈরি করা পণ্যের উপর বিশাল পরিমাণ শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। ফলে আমেরিকার বাজারে হু-হু করে দাম বাড়ছে চিনে উৎপাদিত পণ্যের। এই সুযোগই নিতে চাইছে ভারত। অ্যাপল, ফক্সকন, উইট্রন কর্পের মতো বহুজাতিক সংস্থাকে চিন থেকে উৎপাদন ভারতে সরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রাথমিক পদক্ষেপ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে রয়টার্স সূত্রে খবর।

চিন-আমেরিকা পণ্য যুদ্ধে প্রবল চাপের মুখে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন শিল্প। বহুজাতিক বিভিন্ন সংস্থা তাদের প্রকল্প চিন থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে ঝাঁপিয়েছে ভিয়েতনামের মতো দেশ। এবার সেই তালিকায় কি ঢুকে পড়তে চলেছে ভারতও?

রয়টার্সের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত ১৪ ই অগাস্ট ভারতের পদাধিকারীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। তাতে যে যে কোম্পানিগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে, তার তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। রয়টার্স জানাচ্ছে, কোম্পানির তালিকায় রয়েছে তাইওয়ানের পেগাট্রন কর্পও। সেই বৈঠকের নথিও এসেছে রয়টার্সের হাতে। প্রতিবেদন বলছে, ২৬ শে অগাস্ট থেকে ৫ ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারত সরকার আলাদা আলাদাভাবে সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে। তাদের বোঝানোর চেষ্টা হবে, কেন ভারত লগ্নির জন্য শ্রেষ্ঠ। এই বৈঠকগুলোতে রাজ্য সরকারগুলোর প্রতিনিধিদেরও থাকার কথা বলছে রয়টার্সের প্রতিবেদন।

ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলোকে নীতি এবং উৎসাহ ভাতা হিসেবে কী দেওয়া যেতে পারে, তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ইনভেস্ট ইন্ডিয়ার দফতরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, টেলিকম, ফার্মাসিউটিক্যাল সহ ৯ টি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু বড্ড দেরি করে ফেলল কি ভারত? রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, অ্যালফাবেট আইএনসির গুগল তার পিক্সেল স্মার্টফোন তৈরির কারখানা চিন থেকে ভিয়েতনামে সরিয়ে আনছে। বুধবারই এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। এবছরের মধ্যেই ভিয়েতনামে পিক্সেল ফোন তৈরি শুরু হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, প্রতিযোগিতায় নামতে ভারত কি দেরি করে ফেলেছে? যদিও রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, ভারত কার্যত কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে। ভিয়েতনামের ছোট বাজারের সঙ্গে ভারতের বিশাল বাজারের কোনও তুলনাই হয় না বলে মনে করছে সরকার।

গত সপ্তাহেই ভারতের প্রতিনিধিরা মনোভাব বুঝতে পৃথক পৃথকভাবে ফক্সওয়াগেন, হুন্ডাই মোটর কোম্পানি এবং হন্ডা মোটর কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেছেন। দেশের শিল্প মহলের এক প্রতিনিধি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ভারত সরকার বিশ্বের ভঙ্গুর শিল্প পরিস্থিতিকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে চাইছে, যা অত্যন্ত ভালো সঙ্কেত।

যদিও হন্ডা এই বৈঠকের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। ফক্সওয়াগেন এবং হুন্ডাইয়ের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পায়নি রয়টার্স। একইভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়নি অ্যাপল, ফক্সকন, উইট্রন বা পেগাট্রনের পক্ষ থেকেও ভারতের উদ্যোগ নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

Comments are closed.