বড় ধাক্কা আদানি গোষ্ঠীর, আদিবাসীদের আন্দোলনে দান্তেওয়াড়ায় খনি প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা ছত্তিসগঢ় সরকারের

বড় ধাক্কা আদানি গোষ্ঠীর। আদিবাসীদের লাগাতার আন্দোলনের সামনে শেষ পর্যন্ত দান্তেওয়াড়ার বায়লাডিয়া পাহাড় এলাকায় আদানিদের খনি প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। পাশাপাশি গ্রামসভার সম্মতি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা নিয়েও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ছত্তিসগঢ় সরকার।

গত শুক্রবার থেকে দান্তেওয়াড়ার হাজার হাজার আদিবাসী মানুষ বায়লাডিলা এলাকায় আদানিদের প্রস্তাবিত খনি প্রকল্পের বিরোধিতায় ঘেরাও আন্দোলন শুরু করেন। লাগাতার চারদিন সম্পূর্ণভাবে স্তব্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। এই পরিস্থিতিতে ক্রমেই চাপ বাড়তে থাকে ছত্তিসগঢ়ের কংগ্রেস সরকারের উপর। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল দেখা করে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের সঙ্গে। সেখানেই আদানি গোষ্ঠীকে কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

আদিবাসী এলাকায় জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় গ্রাম সভার অনুমতি। রাজ্য সরকারের দাবি ছিল, সবকটি গ্রাম সভার অনুমতি নেওয়ার পরই প্রকল্পে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। যদিও আন্দোলনকারীরা প্রথম থেকেই এই সম্মতি প্রদান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, সরকার গ্রাম সভাগুলোর সম্মতি আদায় করতে না পেরে কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে। আদানিদের কাজ বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের পর thebengalstory র সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ছত্তিসগঢ়ের সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় পারাতে এতে আন্দোলনের জয় দেখছেন। তিনি বলছেন, সরকার পিছু হঠতে বাধ্য হল। স্বচ্ছ তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে সরকার ও কর্পোরেটের আঁতাতের ফলে কীভাবে যথেচ্ছ লুঠ হচ্ছে ভারতের জল-জঙ্গল-জমিন। গ্রামসভার পদাধিকারীরা থানায় সরকারি দফতরের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করলেই সত্য বেরিয়ে আসবে, আলাদা করে তদন্ত করতে হবে না, বলছেন বস্তারের সিপিআই নেতা মণীশ কুঞ্জম। রাজ্য সরকার চায় না সত্যি বেরিয়ে আসুক, মন্তব্য অন্যতম আন্দোলনকারী অলোক শুক্লের।

এদিকে আদিবাসীদের চাপের মুখে পড়ে সরকারের প্রকল্প বন্ধের খবরে খুশির জোয়ার বায়লাডিলা এলাকায় আন্দোলনক্ষেত্রেও। ছত্তিসগঢ় বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক অলোক শুক্ল thebengalstory কে জানিয়েছেন, সাময়িক নয়, স্থায়ীভাবে এই এলাকায় খননের কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজ্যকে। অন্যদিকে আন্দোলনে সামিল বস্তারের সিপিআই নেতা মণীশ কুঞ্জম thebengalstory কে জানিয়েছেন, সরকার স্পষ্ট করে জানাক, তারা আদানিদের বরাত সম্পূর্ণভাবে বাতিল করবে কি না। এই এলাকার জল-জঙ্গল-জমিন রক্ষায় তারা কোনও অস্থায়ী সরকারি নির্দেশের উপর ভরসা রাখতে পারেন না, বলছেন মণীশ কুঞ্জম। সংযুক্ত পঞ্চায়েত জন সংঘর্ষ সমিতি বৈঠক করে আন্দোলনের ভবিষ্যত রূপরেখা ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন মণীশ কুঞ্জম। বায়লাডিলা এলাকায় আদানিদের প্রকল্পের কাজ বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত এবং গ্রামসভার সম্মতি প্রদান নিয়ে তদন্তের নির্দেশকে আন্দোলনকারীরা আংশিক জয় হিসেবেই দেখছেন। তাদের দাবি, নাছোড় আন্দোলনের মুখে পড়ে সরকার সাময়িক কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত রাখতে এরপর প্রয়োজন হলে আরও বড় আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

Comments are closed.