ত্রিপুরায় ২০ টি সরকারি স্কুল তুলে দেওয়া হচ্ছে ইসকনের হাতে, বিজেপি সরকারের বেনজির সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রশ্ন

ত্রিপুরায় বিপ্লব দেব সরকারের নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। রাজ্যের ২০ টি সরকারি স্কুলকে ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের হাতে তুলে দিতে চলেছে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা। এ বিষয়ে প্রাথমিক কথা শেষ, শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক চুক্তি সাক্ষর হবে বলে জানিয়েছেন ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ। রাজ্য সরকারের বেনজির সিদ্ধান্তে আশঙ্কার কালো মেঘ ত্রিপুরার শিক্ষাবিদদের মধ্যে।
বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, ১৩ টি সরকারি স্কুল ছাত্র ও পরিকাঠামোর অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর বাকি ৭ টি স্কুলে সর্বোচ্চ ১০ জন করে পড়ুয়া রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এই ২০ টি সরকারি স্কুলকে ৫ বছরের জন্য তুলে দেওয়া হবে ইসকনের হাতে। ইসকন এই স্কুলগুলোর পরিকাঠামো উন্নতি করে ফের পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে এবং স্কুলগুলো চালাবে।
ইন্ডিয়ান ট্রাইবাল কেয়ার ট্রাস্ট, ইসকনের এই শাখার তত্ত্বাবধানে চলবে স্কুলগুলো। শিক্ষামন্ত্রী নাথ জানিয়েছেন, সবকটি স্কুলই রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত এলাকায়। সূত্রের খবর, শুরুতে মোট ৫৩ টি স্কুলের দায়িত্ব নিতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল ইসকন। কিন্তু প্রথম ধাপে রাজ্য সরকার ইসকনকে ৫ বছরের জন্য ২০ টি সরকারি বিদ্যালয়ের ভার দিতে রাজি হয়েছে। এই ২০ টি সরকারি স্কুলের মধ্যে ৭ টি স্কুল পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায়, একটি গোমতি জেলায়, ২ টি খোয়াই জেলায়, ৩ টি স্কুল সিপাইজোলা জেলায় এবং ৭ টি সরকারি স্কুল দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় অবস্থিত। ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ জানিয়েছেন, খুব দ্রুত রাজ্য সরকারের সঙ্গে ইসকনের ইন্ডিয়ান ট্রাইবাল কেয়ার ট্রাস্টের এই সংক্রান্ত মউ সাক্ষরিত হবে। রাজ্যের তরফে শর্ত থাকবে, প্রতিটি স্কুলে অন্তত ৩০ জন পড়ুয়া থাকতেই হবে, স্কুলগুলো সিবিএসই বা আইসিএসই স্বীকৃত হতে হবে, কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী স্কুলগুলো চালাতে হবে। রাজ্য সরকার মিড ডে মিল, স্কুলের পাঠ্য পুস্তক এবং ইউনিফর্ম সরবরাহ করবে। স্কুলের মালিকানা থাকবে রাজ্য সরকারের হাতেই।
ত্রিপুরায় ৪ হাজার ৩৮৯ টি সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল রয়েছে। প্রথম ধাপে ২০ টি সরকারি স্কুল ইসকনের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এই পদক্ষেপেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষাবিদরা। ইসকনের মতো ধর্মীয় সংগঠনের হাতে সরকারি স্কুল তুলে দেওয়ার নজিরবিহীন পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে কি শিক্ষায় আরও বেশি করে গৈরিকীকরণ চাইছে বিজেপি? এই প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। পাশাপাশি ক’দিন আগেই অন্ধ্র প্রদেশের একটি ইসকন মন্দির থেকে বিপুল পরিমাণ মিড ডে মিলের চাল উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযোগ, ইসকনের ওই মন্দিরের পুরোহিত মিড মিলের চাল পাচারে অন্যতম অভিযুক্ত। স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ মিড ডে মিলের চাল সরিয়ে, সেই চাল বাইরে বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হত বলে অভিযোগ। এবার সেই ইসকনের হাতেই সরকারি স্কুল তুলে দেওয়ার বেনজির সিদ্ধান্ত বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা সরকারের।

Comments are closed.