কর্পোরেটের লাভ কমেছে ৫.২৩ শতাংশ, ১০-২০ শতাংশ কমেছে টিভি বিক্রি, শিল্পক্ষেত্রে মন্দার আঁচ?

ধুঁকছে গাড়ি বাজার, অবস্থা ভালো না দেশের কৃষিক্ষেত্রেরও। এরই মধ্যে আশঙ্কা বাড়িয়ে মুনাফা কমছে কর্পোরেটের। বেনজিরভাবে বিক্রি কমছে টিভির। মন্দার গ্রাস? প্রশ্ন দেশের শিল্পমহলে।

সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত উৎসবের সময়, দেশে টিভি বিক্রির মরসুম হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও রয়েছে বিশ্বকাপের মরসুম। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, মানুষ বড় টিভি কেনার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন বিশ্বকাপের। এবছরই গিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। কিন্তু টিভি প্রস্তুতকারীরা বলছেন, মন্দার আঁচ এসে পড়েছে টিভি বিক্রিতে। একই অবস্থা দেশের কর্পোরেট সেক্টরেরও। ৩০ শে জুন পর্যন্ত চলতি আর্থিক বছরের প্রথম কোয়ার্টার বিশ্লেষণ করেছে ইংরেজি সংবাদপত্র লাইভ মিন্ট। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের প্রথম ৩ মাসের তুলনায় এবছর নেট প্রফিট বা লাভ কমেছে ৫.২৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে ক্রমেই আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখে ভারতের শিল্পক্ষেত্র।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্দার আঁচ করে কর্পোরেট সংস্থাগুলো আগে থেকেই বিনিয়োগ এবং খরচের পরিমাণে রাশ টেনেছে। সেটা একটি অন্যতম কারণ, পাশাপাশি টাকার দামের ক্রমাগত পতন, দেশে বর্ষার ধীর গতি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের বিনিয়োগে শূন্যতার জেরে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন মন্দার প্রভাব থেকে বাঁচতে আগেভাগেই নেওয়া রক্ষণাত্মক পদক্ষেপের জেরেই কমছে মুনাফা। অন্যদিকে প্রায় একই সমস্যা টিভি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর মধ্যেও। তবে এক্ষেত্রে একটি মৌলিক ফারাক দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। খতিয়ান বলছে, টিভির অফলাইন বিক্রি কমেছে কিন্তু বেড়েছে অনলাইন বিক্রি।

সামগ্রিকভাবে ভারতের টিভি শিল্পের বাজারের নির্যাস হল, গতবারের চেয়ে বিক্রি কমে গিয়েছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। জাপানি ইলেক্ট্রনিক জায়ান্ট প্যানাসনিকের ভারতীয় শাখাও বাড়ন্ত চাহিদার কথা মানছেন। কিন্তু সদা মুনাফার মুখ দেখা টিভি শিল্পে কেন মন্দার আঁচ? পরিস্থিতি এমনই যে বিপুল ছাড় দিয়েও ক্রেতার মন পাচ্ছেন না টেলিভিশন নির্মাতারা।

ক্রোমার চিফ মার্কেটিং অফিসার রীতেশ ঘোষাল বলছেন, এখন ভারতের টিভি শিল্প দাঁড়িয়ে আছে আপগ্রেডেশনের উপর। অর্থাৎ, বাড়িতে থাকা টিভির চেয়ে আরও উন্নত প্রযুক্তির টিভি কেনা। রীতেশের মত, মানুষ সামগ্রিকভাবে টালমাটাল পরিস্থিতিতে টিভি আপগ্রেড করানো নিয়ে নিশ্চয়তার অভাব বোধ করছেন। পাশাপাশি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করলে জিএসটি আরও খানিকটা কমিয়ে দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার, এই মনোভাবও কাজ করছে। যদিও টিভি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, টিভি বিক্রি কমার সাথে সাথে টিভি সংস্থাগুলো বিক্রি বাড়াতে প্রচুর ছাড়েরও সুবিধা রাখছে। তাই জিএসটি কমার অপেক্ষায় না থেকে, এখনই টিভি কেনার উপযুক্ত সময়, দাবি করছেন টিভি বাজারের বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু একথায় চিড়ে ভিজছে না। ক্রমেই কমছে বিক্রি।

টিভির বিক্রিতে যে ধাক্কা, এই প্রেক্ষিতেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমেই টিভির উপর মানুষের নির্ভরতা কমে যাচ্ছে। দেশের তরুণ প্রজন্ম টিভির বদলে মোবাইলেই বেশি স্বচ্ছন্দ। নিজের খুশি মতো মোবাইল কিংবা অন্য কোনও ডিজিটাল ডিভাইসে টিভি অ্যাকসেস করে নিচ্ছেন তাঁরা। ফলে ভারতে টিভির উপর নির্ভরতা ক্রমেই কমার পথে। বিক্রি কমার নেপথ্যে এটাও একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Comments are closed.